সৌম্য ঘোষ
মা নিস্তব্ধতা ভেদ করে কার কণ্ঠ জেগে ওঠে কার ঘুমপাড়ানি গান বিবশ করে তোলে!
মা নিস্তব্ধতা ভেদ করে কার কণ্ঠ জেগে ওঠে কার ঘুমপাড়ানি গান বিবশ করে তোলে!
আত্মহনন আমার আত্মহনন বহমান, আহ্নিক গতি ছুঁয়ে এই চরাচরে। হরিধ্বনি দিতে দিতে, এ বাউলমন— দোতারা ওড়ায় শূন্যে, যেন ছড়ায় বিষণ্ণ খই শেষ যাত্রায়।
বেমানান কার্তুজ জানতে তুমি? মুমূর্ষুর গোঙানি বনাম অন্ধকারের নৈ:শব্দ্যের খেলা চলে সারারাত!
বেঁচে থাকতে ফাদার্স ডেতে তোমাকে উইশ করা হয়ে ওঠেনি কোনোদিন। সাহেবসুলভ উদযাপনের আতিশয্যে তোমার ভীষণ অ্যালার্জি দেখে এসেছি ছোট থেকেই …তোমার জন্মদিনটা ঠিক কবে, বলতে পারেনি কেউ। জানলেও যে কেক কিনে এনে সেলিব্রেশনের আয়োজন করতাম --- তেমনটা একদমই নয়। কারখানা থেকে ফেরার পর গামছা দিয়ে ভেজা শরীরটা মুছিয়ে দিতে পারলেও ওসব বিলিতি আতিশয্যের সাহস জড়ো করে উঠতে পারিনি কিছুতেই।
ভেবেছিলাম কথাগুলো তোমাকে সামনেই বলবো কিন্তু সুযোগ মেলার আগেই, হঠাৎ করে কোন সাত সমুদ্দুর তেরো নদীপার পার,সুদূর দেশ থেকে ডাক এলো তোমার যাওয়ার। তুমি চলে গেলে। বলে গেলে ফিরে এসে শুনবে। তোমার কাজের তাড়া ছিল। তুমি কত ব্যস্ত, কত কাজ তোমার ,আমার কথা শোনার তোমার সময় কই। আমারও কাজ আছে তবে সেসব বড়োই আটপৌরে। তোমার কাজের তাড়া,আর আমার এখন যাওয়ার তাড়া। এবারে চলে যেতে হবে, বেশী সময় নেই আর। তাই আমার সব প্রাণের কথা , লিখে রেখে গেলাম তোমার জন্য। জানো কবি খুব ইচ্ছে ছিল মুখোমুখি দুজনে বসে গল্প করি।
কেউ কখনো চিৎকার করে কিছু বলতো মাছরাঙা দ্বীপের পাড় ঘেঁষে। রোজ বলতো, কাছে যেতে বলতো, কিছু রেখেও যেতে বলতো। তুমি তো জানোই আমি মিথ্যে বলি না। অতএব চোখের আশপাশ লালবর্ণ হলেই আমি বেপরোয়া হয়ে উঠতে জানি। ঝাঁপিয়েও পড়তে জানি জ্যোৎস্নায়, আশ্বাসের সমুদ্রে। দ্বীপ খুব নিরাপদ জায়গা জানো তো? সেখানে বিড়ালে রাস্তা কাটার ভয় থাকে না, ক্রমান্বয়ে বন্যাকবলিত হলেও সর্বস্বান্ত সাজাবার রক্তচক্ষু থাকে না। সেখানে যেটুকু উষ্ণতা থাকে, তাও শীতের প্রতিমাভেদে নতজানু। আজ নিরন্তর বুকে খেজুর গাছের হাঁড়ি বেঁধে জলে ভেসে চলার টান -----
বুজে আসা দীঘির মতো শুয়ে থাকা স্তব্ধ এ সময়ে বুড়ির সুতো হয়ে উড়ে আসছে স্মৃতি! আমার হাজার স্কয়্যার ফিটের তেল-হলুদ সংসারে আজ আছড়ে পড়ছে কুসুমগন্ধি বেদনা যত। স্মৃতির সরণি বেয়ে মনটা আজ যেন এক্কাদোক্কা খেলতে খেলতে হেঁটে চলেছে পিছনের দিকে। চোখের পাতায় যেন ঘনিয়ে আসছে কিশোর যীশুর মতো তোমার মুখ! নিঝুম দুপুরখানা আজ পাঁজর খুঁড়ে অতীতের আলোয় ভেজাচ্ছে চৌকাঠ।
অনেক দিন বাদে তোমাকে চিঠি লিখতে বসেছি। আসলে আমার মনটা কেমন খারাপ হয়ে আছে। এখন তো বৃষ্টির সময়; বর্ষা আমার প্রিয় ঋতু। বারান্দায় বসে আমি একমনে বৃষ্টি পড়া দেখি। খুব ইচ্ছে হয় বাড়ির সামনে বেশ জল জমবে, তাতে আমি নৌকো ভাসাবো। আর আজ সেই ভাবনাটার জন্যই দুঃখ হচ্ছে। নদীর ধারে জেলেপাড়ায় জল জমে গেছে গো!
বড়ো পিপাসা! গলা শুকিয়ে আসছে। তোমাকে ডাকব বলে নীল কালি, তোমাকে লিখব বলে সাদা থান কাপড়ের মত কাগজ খুলে বসে আছি মা! যদিও এ এক অনন্ত চিঠি, তবু শুরুটা হোক নির্দিষ্ট কোনো সময়ে... ধরো যখন প্রথম স্কুলে গিয়ে কাঁদতে শুরু করলাম আর পেট ব্যথার অজুহাতে স্কুল কামাই করা অভ্যেস করে ফেলছিলাম, তুমি পরম যত্নে প্রাইমারি সেকশনের ছোট জ্যোৎস্নাদিকে বলেছিলে আমাকে দেখে রাখতে আর আমি কাঁদলেই তিনি কোলে করে ঘোরাতেন।