সম্পদ বিশ্বাস

সম্পদ বিশ্বাস

প্রিয় আদর,
 
কেমন আছো?
 
তোমার আমার মুখোমুখি দেখা হয় না, তা প্রায় বছর চারেক হতে চলল। ভাবা যায়! জীবন সত্যিই বড় অদ্ভুত এক ভুলভুলাইয়া; এখানে একদা যা মনে হয় অবিশ্বাস্য, একসময় সেটাই হয়ে দাঁড়ায় নিত্যকার অভ্যেস। আসলে গভীরভাবে ভেবে দেখলে দেখা যাবে, তোমার আমার দেখা সাক্ষাতের ভাঁড়ারে অভাব অনটনের সূত্রপাত বছর দশেক আগেই যখন উচ্চশিক্ষার জন্য কলকাতার সুখের চাকরিকে ডিভোর্স দিয়ে পাখির ছানা বাসা ছেড়ে আকাশে উড়ল, যদিও এ সবের পিছনেও মূল উদ্যোক্তা ছিলে তুমিই। সেই উড়ে চলা এখনও সমানতালে বজায় রয়েছে, সাত সমুদ্র তেরো নদী পার হয়ে ভিন্ন ভিন্ন দেশের আকাশে, ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির মানুষের সংস্পর্শে, ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতায়।
 
উড়তে উড়তে আজকাল মাঝে মাঝে বড্ড ক্লান্তিবোধ করি, ডানাগুলোর ভার বড্ড অসহনীয় লাগে। ক্লান্তিটা যতটা না শারীরিক, তার চেয়ে কয়েকশো গুণ বেশি মানসিক, বেশ খানিকটা মানবিকও বটে। প্রতিনিয়ত চারপাশে ঘটে চলা চাটুকারিতা, মিথ্যে বড়াই, মেকি সাফল্যের আড়ম্বর আর পিঠচাপড়ানি কেনাবেচার তথাকথিত সভ্য সমাজে নিজেকে বড্ড বেমানান লাগে, একাকী লাগে। মাঝে মাঝে মনে হয় উড়তে উড়তে এই বিশ্বব্রক্ষ্মাণ্ডের ঘূর্ণাবর্ত থেকে একেবারে বেরিয়ে গিয়ে হারিয়ে যাই শূণ্যে, যেখানে প্রতিনিয়ত নিজেকে সভ্যতর করার অলিখিত তাগাদা থাকবে না। তবে চাওয়া পাওয়া, মান অভিমানের সমস্ত সূক্ষ্ম হিসেব নিকেশ দূরে সরিয়ে রেখে আবারও উড়ে চলি, ডানা দুটো অবাধ্য হতে চাইলে পার্থিব শ্রেষ্ঠত্বের অহংবোধে সুড়সুড়ি দিয়ে বশ মানাই। আসলে ওই যে বড্ড আদর করে নাম রেখেছ, সম্পদ। জন্মাবধি শিখিয়েছ যে নামের সার্থকতা অর্জন করতে হয়, বিনা মেহনতে তা পাওয়া যায় না। আর তাই নামকরণের সার্থকতা অর্জনের যে হোমাগ্নি একদিন জ্বালিয়ে দিয়েছিলে আট বাই দশের ঘরটায়, একনিষ্ঠতার সাথে তা আজও জ্বালিয়ে রেখেছি নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে। এক কামরার ওই আট বাই দশের ঘরটায় একদিকে গ্রীষ্মের দাবদাহে অতিষ্ঠ হওয়া, আরেকদিকে বর্ষায় দেওয়ালে জল চুঁইয়ে ভিজে যাওয়া ঠাকুরের সিংহাসন থেকে আরাধ্য দেব দেবীকে সন্তানসম মমতায় রক্ষা করা, অথবা ওই প্রচণ্ড শীতে কাঁপতে কাঁপতে খোলা বারান্দায় বসে রাতের রুটি করা, সমস্ত প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করেও ধিকিধিকি করে সংগ্রামের মশালটা কিন্তু তুমি ঠিক জ্বালিয়ে রেখেছিলে। এই পরিণত বয়সে এসে জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে ভাবি কী অদম্য জেদ তোমার! ছেলেকে লেখাপড়া শেখাতে হবে, যতদূর সম্ভব, যাতে সবার মাঝে থাকলেও আলাদা করে খুঁজে নেওয়া যায়। আর তোমার জেদের সার্থকতা এখানেই, পোকাটা ছেলের ভেতরেও ঢুকিয়ে দিতে পেরেছিলে যে জীবনে সবার মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে লেখাপড়াই একমাত্র উপায়। প্রতিনিয়ত আশেপাশের মানুষজনের নানারকম প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অপমানের বিরুদ্ধে তোমার নীরব উত্তর মনে করিয়ে দেয় আক্রম-ওয়াকার-আখতারের সম্মিলিত আক্রমনের সামনে রাহুল দ্রাবিড়ের নিঃশব্দে মাটি কামড়ে পড়ে থাকা। আসলে যে মানুষগুলোর জীবনের লক্ষ্যগুলো নিজেদের কাছে ভীষণরকম সুস্পষ্ট, তাঁরাই বোধহয় একমাত্র পারে শত প্রলোভন, বক্রোক্তির মাঝেও ওরকম একেকটা অভেদ্য দূর্গ গড়ে তুলতে। রাহুল দ্রাবিড়ের যেমন আত্মবিশ্বাস ছিল যে গায়ে খান দশেক বলের কালশিটে দাগ পড়লেও ব্যাটের মাঝখান দিয়ে খেলা কভার ড্রাইভগুলোই দিনের শেষে একটা ম্যাচ বাঁচানো শতরান এনে দেবে, তোমারও যেন ঠিক সেরকম আত্মবিশ্বাস ছিল যে ছেলেকে সঠিকভাবে মানুষ করে আশেপাশের মানুষগুলোকে চেকমেটটা শেষ অবধি তুমিই দেবে। আর তাই বোধহয়, ছেলে নামী স্কুল থেকে ম্যানেজমেন্ট পাশ করে রীতিমত ভালো একটা চাকরি পাওয়ার পরেও অনায়াসে জোর করতে পারো চাকরি না করে ডক্টরেটটা করার জন্য। এভাবেও ভাবা যায়! এ যেন সেই দ্রাবিড়সুলভ আত্মবিশ্বাসের ঝলক যে সুযোগ পেলে একদিনের ক্রিকেটেও দশহাজার রান করতে পারে।
 
সে যাই হোক, দীর্ঘকাল যাবৎ ছ’টা ঋতুর ভালোবাসা আর অত্যাচার সমানভাবে সহ্য করে তোমার একার হাতে তৈরি করা স্বপ্নের টয়ট্রেনটা বাস্তবের মাটিতে টুকটুক করে চলতে চলতে যখন সবে গতির ঝড় তুলতে শুরু করেছে, ঠিক তখনই ছন্দপতন। কথা নেই, বার্তা নেই, আলাপ আলোচনাটুকুও না করেই আচম্বিতে তুমি ডানা মেলে অনেকটা উড়ে গিয়ে ঘাঁটি গাড়লে ওই মহাশূণ্যে, তারাদের দেশে। তুমি না সারাটা জীবনই বড্ড বোকা, নাহলে কি আর নিজের হাতে সাজানো টয়ট্রেনটাকে একলা ছেড়ে ওই সুদূর তারাদের দেশে আচম্বিতে পাড়ি দিতে! তুমি নিজেই ভেবে বলো, যতই আমাকে ওই দূরদেশ থেকে সারাক্ষণ দেখতে পাও, আমার সাথে রোজকার দু’বেলার আড্ডাটা না দিয়ে, একসাথে সারেগামাপায় অনন্যার গানের গুণাগুণ পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার না করে, বাসব-কিরীটীর সাথে ব্যোমকেশ-ফেলুদার তুল্যমূল্য বিশ্লেষণ না করে, ‘বিল্লু’র ইরফান খানের পাশাপাশি ‘ইজাজত’এর নাসিরুদ্দিনের অভিনয় ক্ষমতা  নিয়ে আলোচনা না করে বা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কেনই শুধু সুদক্ষ অভিনেতা কিন্তু কখনোই নায়ক না, তার যুক্তিতক্ক না করে তুমি কি আদৌ ভালো আছো! রহড়া সুইটসের রাবড়ি, দানাদার, গুপ্তা ব্রাদার্সের সন্দেশ, কেকস-এর চিকেন প্যাটিস, এগুলো ছাড়া কী করে আছো বলো তো তুমি! তুমি না থাকায় এই কয়েক বছরে আমারও আর খেতে মন করেনা। তুমিই তো শিখিয়েছ, খাওয়াটা একটা আর্ট, খেতে ও খাওয়াতে সবাই পারে না। এত্ত বছরের পার্টনার ছাড়া কি আর আর্ট ভালো লাগে না মনে আসে! তোমার এই তড়িঘড়ি আচমকা তারাদের দেশে চলে যাওয়ার জন্যই আমাদের দুজনের ওই দীর্ঘদিনের স্বপ্নটা বাস্তবায়িত হল না – আমার রেষ্টুরেন্টের হেড শেফ তুমি। আর স্বপ্নটা বাস্তবায়িত না হওয়ায় লক্ষ লক্ষ মানুষজন ভালোমন্দ খাবারের রসাস্বাদন থেকে বঞ্চিত হল। কী ভাবছো? আজও তোমার ছেলের তোমাকেই দোষারোপ করে আবার একটু পরেই আদর খেতে চাওয়ার অভ্যাসটা গেলো না! জানোই তো, আমার একটাই পাঞ্চিং ব্যাগ। ছিলে, আছো, থাকবেও। আজও নিঃসঙ্গ মূহুর্তগুলোয় অনুশোচনা, অসহায়তা, অভিমান, হতাশা যখন আষ্টেপৃষ্ঠে জাপটে ধরে, সে মূহুর্তে ভরসা এই পাঞ্চিং ব্যাগটাই।
 
আবার মাঝে মাঝে মনে হয়, ওখানে হয়তো তুমি ভালোই আছো। নিশ্চয় তোমার স্বপ্নের মানুষগুলোর সাথে প্রায়শই দেখা-সাক্ষাৎ হয়, আর সেই খুশিতেই হয়ত আত্মহারা হয়ে আছো। কী জানি, হয়তো দেখা যাবে রাজ কুমারের সাথে দেখা করে “পাকিজা” বা রাজ কাপুরের সাথে দেখা করে “শ্রী ৪২০” এর মত কালজয়ী সিনেমার পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনায় মগ্ন, নতুবা অনিল চ্যাটার্জ্জীর সাথে “মেঘে ঢাকা তারা”য় সুপ্রিয়াদেবীর ইম্প্রোভাইজেশনটা নিয়ে গভীর আলোচনায় বসে পড়েছো। ছিঁটেফোটাও ভরসা নেই তোমাকে, সিনেমা, গান, গল্প এসব নিয়ে আড্ডা শুরু হলে তোমার ব্যাটে রানের ফোয়ারা। জিনিসটার সম্পূর্ণ তাত্ত্বিক ও তাথ্যিক চুলচেরা বিশ্লেষণ না করা অবধি ক্ষান্ত হও না। আর অ্যাডভান্টেজটা হল, তোমার হাতে রান্নার জাদুকাঠিটা তো আছে না! ওটা দিয়েই এইসব রাশভারী মানুষগুলোকেও নিশ্চিত বশ করেছো একের পর এক কালজয়ী সব আড্ডার জন্য। ওই নরম তুলতুলে ইলিশের ভাপা, ছোলা নারকেল দিয়ে কচুর শাক, ডালের বড়া দিয়ে মোচার তরকারি, ফলুই মাছের ঝাল, আরো কত কী, সে সব আর নাই বা বললাম। এইসব সুস্বাদু বাহারি পদ একবার খেলে ওঁরা যে বারবার আসবেন, সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। জানো তো মাঝে মাঝে যখন লোকজন এটা সেটা রান্না করে প্রচুর আনুসঙ্গিক জিনিস সাজিয়ে স্যোশাল মিডিয়াতে দেয়, ছবিগুলো দেখে মনে মনে শুধু ভাবি যে ফেসবুকের দুর্ভাগ্য তোমার সময়ে ওঁর জন্ম হয়নি। ওহ্, একটা কথা, তুমি এতটা আলোকবর্ষ দূরে চলে যাওয়ায় প্রায় বছর চারেক হতে চলল পায়েস কী জিনিস তার স্বাদ ভুলে গেছি। সত্যিই তুমি কিচ্ছু বোঝো না, বুঝলে কি আর এভাবে উড়ে যেতে!
 
তোমার মনে আছে নিশ্চয়ই ছোটবেলায় তোমার ছেলে অঙ্ক মুখে মুখে করলেও বাংলা রচনায় অজানা কোনো বিষয়ের উপর লিখতে দিলে কীরকম ভয়ে শুকিয়ে যেত। একটা মজার ব্যাপার হয়েছে, শুনবে? তোমার ছেলে আজকাল টুকটাক লেখালেখি করে, গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ। বিভিন্ন সাহিত্যপ্রেমী গ্রুপগুলোয়, বিভিন্ন সংকলনে আরো সব নামী দামী মানুষজনের পাশাপাশি তোমার ছেলের নামও ছাপার অক্ষরে লেখা থাকে। ইতোমধ্যেই ঘরে গুটিকতক সম্মাননা পত্র, স্মারকও জড় হয়েছে। অনেক অচেনা, অজানা মানুষজন আস্তে আস্তে তোমার ছেলেকে চিনছে, জানছে, লেখা নিয়ে এটা সেটা জিজ্ঞাসা করে। গত কলকাতা বইমেলায় একটা গল্পসংকলনের বইও বেরিয়েছে, “অনুরণন”, যেটা পড়ে প্রচুর অচেনা অজানা মানুষজনও প্রশংসা করেছেন, তারা খোঁজখবরও করেন যে পরবর্তী বইটা কবে বেরোবে। কখনো চুপটি করে বসে ভেবে দেখো যে জীবনের এই অন্যতম মূহুর্তে পাশে তোমার উপস্থিতিটা কতটা জরুরি ছিল। আমার জীবনের সমস্ত মাহেন্দ্রক্ষণেই যে তুমি বটবৃক্ষের মত আমাকে আগলে রেখেছ, প্রথমবার তার ব্যতিক্রম হল। কখনো সময় হলে পড়ে দেখো, দেখবে পুরো বইটা জুড়েই তুমি মিশে আছো। একটু ভালো করে কান পাতলেই প্রতিটা গল্পেই আসলে তোমার চিন্তা ভাবনার অনুরণন শোনা যায়। নিজেই ভেবে বলো, এই বইটার প্রথম কপিটা কি তোমার হাত দিয়েই উন্মোচন করা যথাযথ হত না! তাহলে কী দরকার ছিল এত চটজলদি দূর‌দেশে পাড়ি দেওয়ার!
 
তবে হ্যাঁ, এই কয়েক বছরে, তুমি কাছে থেকে আমায় যতটা না বড় করেছিলে, দূরে থেকে তার চেয়েও অনেক বড় করে দিয়েছ, অনেকটাই। জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতে প্রথমবার একা চলতে গিয়ে অনেক মানুষ চিনতে শিখেছি, বিশ্বস্ত বন্ধুর ছদ্মবেশে ছোবল মারা নাগ-নাগিনী চিনতে শিখেছি, সবচেয়ে বড় কথা নিজেকে চিনতে শিখেছি। সবটা যত চিনছি, তত বুঝছি যে তুমিই ঠিক। কারো ক্ষতি না করলে শত চেষ্টাতেও কেউ আমার ক্ষতি করতে পারবেনা, আর অকারণে কারো ক্ষতি করলে সময়ের ব্যবধানে তার ফল পেতেই হয়। নিঃশব্দে জীবন থেকে কিছু আপাত প্রয়োজনীয় জিনিস মুছে ফেলেছি, যেমন, দুরন্ত এক্সপ্রেস, দক্ষিণেশ্বর, পিজ্জা। আসলে একটা ছেলেকে নিজের সমস্ত টাকা-পয়সা, সম্পত্তি মায়ের ফিরে আসার জন্য দাও রেখেও জীবন যুদ্ধে হেরে যেতে দেখার পর এটুকুই উপলব্ধি হয়েছে যে, জীবনের প্রতিটা মূহুর্ত অনিশ্চিত অথচ তার কতশত পরিকল্পনা আমাদের মনে, আর জীবনের একমাত্র নিশ্চিত ঘটনা হল মৃত্যু অথচ সেটার কোনো পরিকল্পনাই করিনা। আমাদের সবার জীবনে বাইরে থেকে দৃশ্যমান হাজারো বিজয়তিলক থাকলেও একটা দুটো এমন অদৃশ্য হার থাকে, যার রক্তক্ষরণ চলে আজীবন। প্রায় বছর চারেক আগে যেদিন “রত্না বিশ্বাস” থেকে শুধুই একটা “বেড নং ৪৬০” এর পরিচয় নিয়ে শেষবারের মত হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে অবশেষে গঙ্গার ঘাটে “টোকেন নং ৬” হয়ে পাড়ি জমিয়েছিলে সুদূর তারাদের দেশে, সেদিনও বলেকয়েও কেউ আমার চোখে জল আনতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবেনা। তোমার আমার দোস্তি থাক না সঙ্গোপনে, একান্তই আমাদের দুজনের সম্পত্তি হয়ে; থোড়িই তা বিজ্ঞাপনের জিনিস। বিস্কিটের বিজ্ঞাপনে ‘এ স্বাদের ভাগ হবে না’ পাঞ্চলাইনের মত আমিও বলতে চাই, এই অনুভূতির ভাগ হবেনা।
 
তোমার মনে আছে নিশ্চয় যে মহাভারতে কর্ণ যখন কবচকুণ্ডলহীন হয়ে গেছিল, যখন রথের চাকা বসে গেছিল, তখনও অসহায় হলেও কর্ণ কিন্তু লড়েছিল সাধ্যমত। আমিও তো কবচকুণ্ডলহীন হয়েছি প্রায় বছর চারেক আগেই, যেদিন তুমি এ পাড়ার তল্পিতল্পা গুটিয়ে পাড়ি জমালে ওই তারাদের দেশে। তবু তোমার দেওয়া নামের সার্থকতা অর্জনের উদ্দেশ্যে জীবনের কুরুক্ষেত্রে লড়ে যাব সবটুকু উজাড় করেই, শেষ রক্তবিন্দু থাকা অবধি। না হলে যে আজ থেকে বহু বছর আগে ওই আট বাই দশের ছোট্ট ঘরটায় শুরু হওয়া তোমার চোয়াল চাপা লড়াইটা বৃথা যাবে।
 
ভালো থেকো আদর। আমার আসতে একটু দেরি হবে, তবে আসব ঠিক একদিন, পথ খুঁজে খুঁজে তোমার কাছে। তারপর জমিয়ে দুজন একসাথে মোটা সঞ্জীবের ফ্রুট আইসক্রিম খাবো। ও মনে হয় তোমার কথা ভেবেই তড়িঘড়ি এখানকার ব্যবসা গুটিয়ে তোমার ওখানে আইসক্রিমের দোকান খুলেছে।
 
বিজ্ঞান এখনো সরাসরি তোমাদের জগতের সাথে আমাদের ইহলোকের যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেনি, শুনছি নাকি কাজ প্রায় শেষের পথে, সামনের পূজোয় হাতে হাতে পাওয়া যাবে। অনেক বলে কয়ে গনেশের ইঁদুরটাকে রাজি করিয়েছি যে যাওয়ার সময় আমার এই চিঠিটা যাতে নিয়ে গিয়ে তোমার হাতে পৌঁছে দেয়।
 
ভালো থেকো, ভালো রেখো। দ্বিতীয়টায় তো তুমি সিদ্ধহস্তা, চিন্তা প্রথমটা নিয়ে। আশা করি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে সেটাতেও সিদ্ধহস্তা হয়ে উঠবে।
 
ইতি,
তোমার যখের ধন

Leave a Reply