অনন্ত বিকেলের রূপকথারা
শাশ্বত বোস
ঝলসানো আকাশের সিঁদুরে মেঘে, শেষ বিকেলের মায়া জড়ানো, ডুবন্ত সূর্যের আলোটা তখনও বেশ স্থির। স্থূল কোণের দ্রাঘিমাংশ বেয়ে শূন্যগর্ভের দিকে এগিয়ে যাওয়া আমাদের এই বাড়িটার লাগোয়া বাগানে, চাঁপা গাছটায় ফুল ফুটেছে, পোয়াতি ঝরনার মতো। এমন বিকেলেই আগে প্রেম আসতো নিয়মিত, স্বপ্নবিলাসী মনের অনিত্য ডাকঘরে। আলতো ভাঁজে লুকোনো চিঠি রেখে যেত ভেজা ভেজা মাছরাঙা। দূরের পুকুরটার জলে ছায়া পড়ত আম, জাম, সুপুরি গাছের এখন ওটাকে প্রায় অর্ধেক বুজিয়ে ফেলেছে জমি হাঙরের দল, বাজারি স্ট্যান্ডার্ড বাসা বানাবার কদর্য বাসনায়। ছদ্মবেশী জানোয়ারের কপট থাবায় পাড়াটার বনেদি শরীরে এখন শুধু দগদগে ক্ষত। জায়গায় জায়গায় খুবলে তুলে ফেলা মাটির ভেতর যান্ত্রিক দানব মেপে চলেছে অশনির নিরাবরণ শরীরের দাম। চার ফুট রাস্তার ছোট্ট এঁদো গলিটা আমার জন্মের কাল থেকে বয়ে নিয়ে চলেছে ব্রাত্য সময়ের একাকিত্বের নিনরণি শ্লোক গাঁথা। সেখানে এখন ফ্ল্যাট বাড়ি বানাবার ধূম লেগেছে। জননীর শরীরে চুপিসারে গজিয়ে ওঠা অপ্রয়োজনীয় জননকোষের সিস্টিক গ্রোথের মতো, খুব দ্রুত গজিয়ে উঠতে চাইছে উঁচুউঁচু বাড়িগুলো। পড়ন্ত শীতে পুরোনো বাড়িটার কার্নিশ বেয়ে ক্ষীণ শরীরে নামতে চাওয়া শেষ রোদ্দুরটার মুখ লুকোবার জায়গাটুকুও মুছে দিয়ে, আর্থিক কামনা আর ইতর শ্রেণীর লোভের রিরংসা জন্ম দিতে চাইছে ৮/৮-এর কিছু গাহর্স্থ্য, যা আসলে আত্মশ্লাঘার গুমনামী শর্বরী। ঝাপসা চোখে আয়েশি আলোর প্রতিসরণে দেখি, গলির মোড়ের ধোপা বস্তিটার গা বেয়ে ইট বের করে ঘর উঠেছে। জমি দখলের লড়াইয়ে এক পাও পিছোয় না কেউ। আমাদের বাড়ির ঠিক পাশটায় ছিল মিত্তির কাকুদের বাড়ি। মফস্বলের এই ছোট শহরের ঘুম ধরানো এঁদো গলিটার জন্মলগ্ন থেকেই ছিল ওদের বাস। মিত্তির কাকু মারা যাবার পরই বিমলা কাকিমা বিছানা নিলেন। ওদের মেয়ে কুসুম ছোটবেলায় আমাদের সাথে পড়ত, বিয়ে হয়েছে সুদূর দিল্লিতে। মায়ের অসুখের সময় এখানে থেকে করেছিল খুব। কাকিমা আজ আর নেই, ছেলে বিদেশ থেকে আর ফিরবে না। প্রোমোটারের হাতে চলে গেলো বাড়িটা। গত দু-সপ্তাহ বাবদ সমানে স্বপ্ন ধ্বংসের অশরীরী আস্ফালন অনুভব করেছি। জানলা বন্ধ ঘরে বসে, অনন্ত ক্লান্তির পরে চোখ জুড়ে নেমেছে এক কিশোরীর মেয়েবেলার স্বপ্ন। ছোটবেলায় পাঁচিল বেয়ে যেতুম পাশের বাড়িতে, পুজোর জন্য টগর ফুল তুলতে। কুসুম,আমি আর সমবয়সী মেয়েরা মিলে সারা পাড়া দাপিয়ে বেড়াতাম বৈরী জ্যৈষ্ঠের প্রখর দুপুরে। এক ঝাঁক কিশোরীর বিরামহীন দস্যিপনা মোহন সুরে কবিগান লিখত, নোনা স্রাবে ভেজা পাড়াটার আঁচল বেয়ে। আজ বৈবস্বত কালের এক প্রহেলিকাক্ষণে আবার আমি এ বাড়ির ছাদে উঠলাম, অনেকগুলো অভিমানী কালবেলা পেরিয়ে। অনেক অ্যান্টি পোয়েটিক বিকেলের সর্বনামী জড়িমা গায়ে মেখে শ্বেতচাঁপা গাছটা আজ আমাদের বাগানে যেন মূর্তিমান রামকিঙ্করী কথকতা। তার শরীর বেয়ে এক ঝাঁক পরিশ্রমী পিঁপড়ে গেয়ে চলেছে স্বেদ-মুখর জীবনমুখী গান। গাছটা আমার মায়ের হাতে পোঁতা, চাঁপাফুল মায়ের খুব প্রিয়। মনে পড়ে যাচ্ছে ছোটবেলায় গাছটা পোঁতার পর আমি আর মা একসাথে জল দিতুম রোজ। কামিনী রঙা শাড়িতে বন্ধুর সমাসে, বিন্দু বিন্দু ঘামে পেঁচিয়ে, মা বলতো “বড় হয়ে তুই এই গাছটার মতো হোস, আর গাছটাও যেন তোর মতো হয়।” আমার দু-চোখ জুড়ে তখন বৃষ্টি নামত পূরবী রাগের আলাপে। বিসমিল্লার ত্রিদিবী সংগীত রচনা করতো গন্ধ রসের আশাবরী। আজ এই প্রেমহীন বিকেলটায় মনে পড়ে যাচ্ছে অনেককিছুই। শেষ দু-তিন দিন ধরে যান্ত্রিক অসভ্যতা বন্ধ ছিল, বদলে শোনা গেছে মজদুর শ্রেণীর কিছু মানুষের অবিন্যস্ত কলরব। মাঝে মাঝে তাদের কথোপকথনে জাল বুনেছে রুচিহীন পর্যায়ের খিস্তিখেউড়। এটাই যেন এখন এই পাড়াটার ভবিতব্য। আজ বুঝলাম “আশানীড়” এর ধ্বংসকাজ শেষ। এবার তবে শব পরিষ্কারের পালা। দূরে তাকিয়ে ওই বাড়িটাকে কেমন চেনা লাগে। চেনা আঙুলের খাঁজে ফোঁটা বিকেল, সেই বিকেল ঘেঁষে নেমে আসা স্যাঁতস্যাঁতে লোহার গেটটা ঘিরে ধরে আমায়, আমার চেতন ক্রমশ চুরি করে নিয়ে যায় অনল্প আত্মার ট্রাপিজে জমা হওয়া গলির মুখে রিক্সাস্ট্যান্ডটা। নিঃসঙ্গ নিশিযাপনে অভ্যস্ত আপাত স্থবির হিমশৈলের মতো দাঁড়িয়ে আছে বাড়িটা। বিরহী আফ্রোদিতির ঢঙে আমার দিকে তাকিয়ে, যেন বুনে দিতে চাইছে ইজিপ্টিয়ান প্রান্তিক লোকসঙ্গীত। বাড়িটাকে চিনি সেই ছোট থেকেই। আমাদের এ পাড়ায় আসার কিছু পরে এ পাড়ার তৃতীয় সভ্য হিসাবে, ওঁদের পা পরে এই পান্ডব বর্জিত নির্জনালয়ে। আজ এতদিন পর এ বাড়ির ছাদ থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ওদের ছাদটা। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, জীর্ণতার গুলাল গায়ে মেখে, পিতাম্বরী, হৈমন্তী বিকেলে মৃতবৎসায় নিসর্গ্য চিত্র ফুটিয়ে তুলতে পারা বাড়িটা দেখে, মনের কোনে জং-পড়া সিন্দুকের তালাবন্ধ অনুভূতির আভেরি এসে জড়িয়ে ধরছে আমায়। কঞ্জম আকাশের দিকে চেয়ে থেকে মনে পড়ে যাচ্ছে নকশিকাঁথার মাঠের সেই লাইন, “এই এক গাঁও ওই এক গাঁও মধ্যে ধু ধু মাঠ ধান বাউলের লিখন লিখি করছে নিতুই পাঠ।” ছোট থেকেই ওই বাড়ির ছেলে মেয়েগুলোর সাথে ছিল দ্বিধাহীন গাঢ় সম্পর্ক। খেজুরের রস যেমন থিতিয়ে পড়ে আঠা হয়ে যায়, শীতের সকালে ধোঁয়া ওঠা আকাশ যেমন ঢেউহীন হয়ে ভাসতে থাকে শূন্যে, সেরকম পিটোপিটি ভাই বোনগুলোর সাথে আমরাও মিলেমিশে গেছিলাম, দেওয়াল জোড়া ধনাত্মক চুন সুরকির গাদে। সন্ধেবেলার মুড়িটা এখানে খেলে, রাতের তরকারিটা চাইতে না গেলেও পাঁচিল বেয়ে বেয়ে ঠিক এসে যেত। বাবা অফিস থেকে গঙ্গার তাজা ইলিশ নিয়ে ফিরলে, কয়েক পিস্ ফ্রকের তলায় চাপা দিয়ে ঠিক চালান হতো ও বাড়ি। ওই বাড়িতেই কিশোরীকাল ধরা দিল গোপন খামে। ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি বুকে নিয়ে নীরবতা মুখর হল, কোন এক অশ্মানী বসন্ত বিকেলে । লম্বা রোগাপানা টিকালো নাকের ছেলেটা, বাবার অসুখের সময় সব থেকে বেশী করেছিল যে, সদ্যযৌবনা কিশোরীর অভিতপ্ত হৃদয় জয় করতে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি তার। বাবা অকালে চলে গেলেন। বেঁচে থাকলে কী হতো বলা মুশকিল! ধর্মনিষ্ঠ গোঁড়া ব্রাহ্মণ ছিলেন, আমরা বামুন ওরা কায়েত, কুলীন হলেও। মনে আছে খুব ছোট বয়সে ধোপা বস্তিতে খেলতে গিয়ে, একবার সত্য ধোপার বাড়ির অন্নপূর্ণা পুজোয়, সবার সাথে খেতে বসে গিয়েছিলাম। ছোট জাতের ছোঁয়া খেয়েছি বলে বাবার কাছে খড়ম পেটা আর গোবর খেতে হয়েছিল সেদিন। সেই বাবা যে কোনোদিন “মা” ছাড়া ডাকেনি আমায়, পুজোয় অন্য কারোর কিছু না হলেও আমার একটা জামা হবেই। সেই লক্ষ্মীপনা ঘুচিয়ে দিয়ে, তীব্র অনাহার দেখেছি, বাবা মারা যাবার পর। সেই নিদারুণ দারিদ্র্য পোয়াতে দেখেছিলাম সেই টিকলো নাক, ঝাঁকড়া চুল, লম্বা মতন ছেলেটাকেও। সামান্য একটা অক্সিজেন সিলিন্ডারের অভাবে, যে নিজের মাকে বাঁচাতে পারেনি। সমব্যাথা বদলে গেল অনুরাগে। এক সিঁথি লাল সিঁদুর, ছোট্ট লাল টিপ, আর লালপেড়ে শাড়ি জেনেছিল প্রবৃদ্ধ সংসারের মানে। ভালোবাসার চাদরে জড়িয়ে নিয়েছিল, আরেকটা যৌথ পরিবারকে। সন্ধেবেলা তুলসী তলায় প্রদীপ দিয়ে গোচনা ছড়িয়েছিল। “নিশ্চল নীরব অশ্রুখানি, বহু মাল্যের স্মরণহার গাঁথি আজি চলে যায় নিবিড় চরণ পরে, ও গো প্রিয় ও মোর নির্জন দ্বীপ সাথি।” কবিতা লেখা আমার কিশোরী বেলার অভ্যাস, খিল-তোলা বন্ধ দুপুরে আবদ্ধ চিলেকোঠার ফসল। কোনোদিন নাম হলো না তেমন, শুধু আমার শিমুল শিউলির বিটপীরা ভবিষ্যৎহীন পরিচয়ের মাঝে ক্লোরোডাই-ফ্লুরোমিথেনের গন্ধের আবেশে ঢাকা এক বাগান বোগেনভেলিয়া হয়েই রয়ে গেল, রঙিন খসখসে। শূন্যে ঝুলতে চাওয়া নীল পাখিটার পালকে বেঁধে ওড়াতে পারলাম না ওদের, পারলাম না এক বুক আগুনে পুড়িয়ে দিতে। এই গলিতে আকাশটা আগে নীল হতো, এখন আর হয় না। রুক্ষ রাবিশ আর ধুলোর ধোঁয়াশায় উনপাঁজুড়ে আকাশটা সেই কবেই ধূসর হয়ে গেছে। আমার না দেখা স্বপ্নরা এখন সেই ধুলোতে হারিয়ে যায়। সামনের পুকুরটায় আর ঢেউ ওঠে না। ঝুপ করে বসতে চাওয়া মাছরাঙাটাকে সেদিন গিলে নিল এক বিশাল কদাকার দানবীয় থাবা। পুরোনো বাড়িগুলোর ঘুলঘলি বেয়ে খেলা করে না আলোর প্রতিসরণ। আর সেখানে বাসা বাঁধে না নোটন পায়রার দল। পুকুরটার শরীরের অর্ধেকের বেশি প্রণালী বন্ধ করে ফেলেছে কংক্রিটের নিরন্তর ওজঃ অস্থিসার। এই স্থায়ী ভঙ্গুর অবক্ষয়িত দিনকালটার পাশে এখন একমাত্র আমি আছি, আমার শেষ শক্তিটুকু নিয়ে। ছেলেটার ডিভোর্স হয়ে গেছে, বিদেশে একা থাকে। আমি তবু স্বার্থপরের মতো পড়ে থাকবো নিজের বাড়ি আগলে। এ শুধু আত্মকেন্দ্রিকতা নয়, আমি চাই না, আমার সাথে সাথে শেষ হয়ে যাক, হাজার হাজার শঙ্খচিল, শালিকের বাসস্থান। আমি চাই আজও মানুষ ও প্রকৃতির বিশ্বাস অটুট হোক। আমি জানি আগামী যে কোনো বৃষ্টিতে বানভাসী হব আমি, তবু লড়ব। সারা জীবন সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট সার্ভিস করেছি, নিজের জীবন নিজে বেছে নিয়েছি। স্বামীর মৃত্যুর পর, হঠাৎ করে পাল্টে যেতে দেখেছি আশৈশব পরিচিত চেনা মুখগুলো। সহ্য করিনি, ফিরে এসেছি নিজের বাড়িতে, মাকে দেখেছি শেষ বয়স পর্যন্ত্য। বাকি ভাইবোনেরা আপত্তি করেছিল, তবু মা তার এই ছোট মেয়েকে বাড়িটা লিখে দিয়ে গেছেন। সাথে দিয়ে গেছেন এক বিচিত্র বিমুখতার সোপান। আমাকে যে দশভুজা হতে হবে, আমার ছোটবেলার একান্ত দিনযাপনের সেই সাথীদের যে আমাকেই রক্ষা করতে হবে। বাবা হলে বলতেন “মাইয়ার পয়সায় খাওনের আগে আমার যেন মরণ লাগে।” আজ একটা খোলা চিঠি দিতে চাই বাবাকে, আমার স্বামীকে কিংবা দূরদেশবাসী আমার আদরের “সোনাই”কে। “দেখো আমি বাঙালের মেয়ে, ঘটিপাড়ায় আমাদের সবাই “জার্মান” বলে ডাকত। সেই আমি “ইন্দ্রাণী ঘোষ”, বাঙালের মাইয়া, দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করতে জানি। একটা আস্ত দেশ, আস্ত শহর যখন ধুঁকছে আগামী পৃথিবীর বিষণ্ণতায়, তখন জোর গলায় বলছি, এক-গলা আবর্জনা নিয়ে আমায় চাপা দিয়ে দিলেও, চাঁপা ফুলের গাছটার মতো ঠিক মুখ তুলে তাকাবো আবার। আমায় ছিঁড়ে উপড়ে ফেলা যাবে না।” গত পরশু প্রোমোটার লোক পাঠিয়েছিল, জোর গলায় চলে যেতে বলেছি। মা বলেছিল, ‘বর্ণালী বসন্ত বিকেলে এক ফালি উমেদ হোস, প্রচণ্ড তাপদগ্ধ দিনে ছায়া দিস সকলকে। কথায় জন্মান্তর আনিস।’ আর সেই শ্বেতচাঁপা গাছটা চুপিচুপি আমার কানে কানে বলত বড় হয়ে ও বনবীথিকা হবে, চৌকো হয়ে শীত আসার আগে, পুরো বাড়িটাকে ঢেকে ফেলবে মেয়াদত্তীর্ণ নামহীনতায়। আমিও ঠিক ওর মতো উদ্বাহু হয়ে বাবার শেখানো বুলি আওড়াবো, কোনো এক বিবাদী আশ্বিনের ভোরে, “বলং বলং বাহু বলং।” লোহার গেটটা খুলে ছোট্ট একটা ফ্রক পড়ে এক পা তুলে নাচতে নাচতে ঢুকছে আমার প্রাণের ধন, দুপুর রোদের নরম বালিশ, আমার আদরের সই, রূপকথার রাজ্যের রাজকন্যা “মিঠি”। না, আরও অনেক কিছুর মতোই ওকেও আমি ছাড়তে পারবো না। ওকে যে আমার উত্তরসূরি করে যেতে হবে। তাই তো ছেলের হাজার ধমকানি চমকানিতেও ওকে আমি বিদেশে ছাড়িনি। “কী গো ভাইয়া আজ এলাটিন বেলাটিন খেলবে না?” “খেলবো রে খেলবো, তার আগে আয় বাগানটা জুড়ে আমরা লুকিয়ে পড়ি, দেখতো খুঁজে পাস কিনা?” চারপাশের রাক্ষুসে শীৎকারের মাঝে হালকা শীতে ডুব দিয়ে আমরা যমজ ভাইয়া, শরীরে জুড়ে থাকি আর ভেসে যাই চেতনার নিরন্তর নিঃসরণে। ঠিক যেমনটা ছোটবেলায় মায়ের সাথে, আবেশী আঁচলে মুখ ঢেকে, নিজেকে খুঁজে বেড়াতাম ভোরের ভৈরবীতে। “সোহাগ পানা চাঁদের কণা, মণিমানিক রতন নিজল রোদে দিস যে উঁকি, মুক্তো জ্বলে ঝিকিমিকি রাতের কোলে প্রদীপ জ্বেলে, তারার দিনযাপন।” নির্জিত চাঁদ আর নিস্তেজ সূর্য যেন খেলা করে অভিলাষী আলোর স্রোতে। সমীকরণে উপপাদ্যের গ্রহণ লাগে আর শুরুয়াতি জোয়ার ভাঁটায় রোহিনী, উত্তর ভাদ্রপদের বুক শুকিয়ে যায়। ইন্দ্রাণীর নবজন্ম হয় রাজেন্দ্রাণী রূপে।, প্রান্তিক অনুভূতিগুলো দেহান্তরে যতিবিহীন সনেট হয়। বাতাসে তখন ধুলোটে, পচনশীল বর্জ্যের পূতিগন্ধ ছাপিয়ে, পড়ন্ত বেলার চাঁপা ফুলের গন্ধ। |