রূপালী মান্না

রূপালী মান্না

প্ৰিয় কবি ,
প্রযত্নে – নক্ষত্রখচিত সাহিত্য আকাশ।


প্ৰিয় কবি , 
বাইশে শ্রাবণ উপলক্ষ্যে কত কবি সাহিত্যিকরা তোমায় নিয়ে লেখালেখি করছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে তোমায় ঘিরে। এমনই এক বৃষ্টিমুখর শ্রাবণে চিঠি লিখতে বসলাম তোমায় । 


জানো কবি,
একবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সারা দুনিয়া আজ হাতের মুঠোয়। এই ফাস্ট যুগে মেইল এর ব্যবহারটাই মানুষ বেশি করে যাতে বার্তা খুব দ্রুত পৌঁছায়। কিন্তু চিঠি একটা সুন্দর ঐতিহ্য বহন করে , তাই ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মেলবন্ধন ঘটাতে আজ এই আয়োজন।


জানো কবি ,
আজও সাহিত্য রচিত হচ্ছে , সাহিত্য চর্চাও হচ্ছে ভীষণভাবে। ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইনস্টাগ্রাম নামক অ্যাপসগুলির মাধ্যমে সারাবিশ্বে মুহূর্তেই ভাইরাল হয় বিভিন্ন বার্তা। ফেসবুক অ্যাপটি সামাজিক মাধ্যম হলেও বর্তমানে এটি সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে বলা যায়।


জানো কবি ,
নবীন ও প্রবীণ কবি-সাহিত্যিকদের বইগুলি, মানুষ অনলাইন বুক স্টলে অর্ডার করে, ঘরে বসেই সহজেই বই পেয়ে  যায় কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে। আবার ফেসবুকের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকাশনীর সাথে পরিচয় করে, ইমেলের মাধ্যমে লেখা পাঠিয়ে, নেট ব্যাঙ্কিং এর মাধ্যমে টাকাপয়সা লেনদেন করে লেখক , সম্পাদক, প্রকাশকরা ঘরে বসেই বই প্রকাশের মতো কাজগুলো করতে পারে খুব সহজেই। 


জানো কবি ,
একেবারে নিম্নবিত্ত ঘরের মেয়ে হয়েও আমি লেখালেখি করে বই প্রকাশের মতো সাহস করেছি। সঙ্গে সঙ্গে সম্পাদনার কাজও করি। নামকরা কবি-সাহিত্যিকদের সঙ্গে  খুঁজে আনি নতুন প্রতিভা, নতুন মুখ । সাহিত্য জগতে যত পুরনো হতে হতে জায়গা করতে করতে যাবো, নতুনদের জন্য জায়গা করে দিতে হবে এটা আমার প্রবল ইচ্ছা বলতে পারো। সাহিত্যজগৎ তো আমাদের সকলের তাইনা বলো ? এ আকাশে একা বিরাজ করা যায়না , সকলকে নিয়েই সাহিত্য আকাশ উজ্জ্বল করে তুলতে হবে। তাই হিংসার বাতাবরণ মুক্ত সুন্দর সৃষ্টিশীল জগৎ গড়ে তোলাই হোক আমাদের লক্ষ্য। এই মানসিকতা নিয়ে কাজ করছেন অনেক লেখক ও সম্পাদক। তাঁদেরও সার্বিক সাফল্য কামনা করি। 


জানো কবি,
বিশ্বের বৃহত্তম বইবাজার কলেজস্ট্রিট জীবনে প্রথমবার দেখলাম ২৩/৭/২০২২. তাও আবার নিজের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ – ” অগ্নিকন্যা ” প্রকাশের দিন। একটা কথা তুমি জানলে অবাক হবে – কোচিং করতে গিয়ে প্রথমবার বইমেলা দেখেছিলাম ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে । ভাবতে ভালো লাগে ২০২০ সালের ২ অক্টোবর আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ” স্বপ্নপথে” প্রকাশিত হয় ।২০২১এর চুঁচুড়া বই মেলায় বিভিন্ন বুক স্টলে বিক্রি হচ্ছিল”স্বপ্নপথে”। তখন বিভিন্ন সংগঠনের আমন্ত্রণে বই মেলায় গিয়েছিলাম সে এক অভূতপূর্ব আনন্দ বলে বোঝাতে পারবো না তোমায়।


এজন্যই আমি সবাইকে বলি, বইমেলা না দেখা, কলেজস্ট্রিট না দেখা, নিম্নবিত্ত ঘরের মেয়েটির লেখা বই যদি বইমেলায় বিক্রি হয়ে পাঠকপ্রিয়তা পেতে পারে তাহলে তোমরা কেন পারবে না নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে ? আসলে, ইচ্ছাশক্তি, ধৈর্য্য, হার না মানা জেদ আর কঠিন পরিশ্রমের দ্বারা আমাদের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করা সম্ভব।


জানো কবি ,
ফেসবুকে আজকাল প্রচুর মানুষ লেখালেখি করে আর লেখা পড়েও অসংখ্য মানুষ। সকলের বই কেনার সামর্থ্য না থাকলেও লেখা পড়ে, বোঝে, সাহিত্য ভালোবাসে এটা ভেবেই ভীষণ ভালো লাগে। তবে একটু আধটু, কমবেশি যদি বই কিনে পড়া যায় তাহলে বই জগৎকে বাঁচিয়ে রাখা যায়, একথা তুমি একটু বলে দিও তো।


জানো কবি ,
আজ এতবছর পরেও বাঙালি তথা সমগ্র বিশ্ববাসীর অনুভূতিতে তুমি মিশে আছো একই রকম ভাবে। শুধু সাহিত্য সংস্কৃতিতে নয় মানুষের জীবনের প্রতি পরতে পরতে তোমার সৃষ্টির জয়ধ্বনি । তাই বলি –


” তুমি নও শুধু পঁচিশে বৈশাখ বাইশে শ্রাবন
তোমার ভাবনায় ভাবিত প্রতিক্ষণ , 
তোমার কলমের স্পর্শে ধন্য মানব জীবন।”


ভালো থেকো কবি , ভালোবাসা নিও  আর আশীর্বাদ কোরো আমরা ও আগামী প্রজন্ম যেন বাংলা সাহিত্যকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।


ইতি,
তোমার আশীর্বাদপ্রার্থী রূপালী 

Leave a Reply