রাহুল জানা
প্রিয় অগ্নিকন্যা চারুলতা, জুলাইয়ের এক উষ্ণতম দিনে প্রেমের প্রথম ফাগুন হাওয়ায় হৃদয়ের আঙিনায় ফুটে উঠেছিল ভালোবাসার কৃষ্ণচূড়া। সেই ফুলের সুবাস মাতোয়ারা করে তুলেছিল একাত্ম হয়ে ওঠা আমাদের দুই মনকে। যেদিন কাঁচের পর্দার জগৎ ডিঙিয়ে তোমার শহরে এলাম, শুভদৃষ্টি হল আমাদের। সেদিন উপলব্ধি করি,তোমার যে চিত্র তোমার চিঠিগুলোয় ফুটে উঠতো তার চেয়েও তুমি সুন্দর। আমার মনকাননের প্রতি পরতে পরতে সে সৌন্দর্য অস্থাবর এই হৃদয়কে ব্যাকুল করেছে বারংবার। মানসপটের ক্যানভাসে যেভাবে তোমাকে এই দুটি বছর ধরে এঁকে এসেছি তার ধারেকাছেও আমি আসতে পারিনি। আমাদের ব্যবধান শত মাইল হলেও আমরা মনের এক ঘরেই পাশাপাশি ছিলাম। যে ভালোবাসার পরীক্ষা আমরা সময়ের কাছে দিয়েছিলাম আজ তা সার্থক। ভাবিনি আমাদের পথ আবার মিলবে। তবে ধৈর্য,সংযম আত্মপোলব্ধির পথে এটুকু বুঝতে পেরেছি আমরা আলাদা থাকতে পারবো না। যতবার তোমার চিঠির পাতাগুলো উল্টেছি ততবারই তোমাকে নতুন করে আবিষ্কার করেছি। সে লেখায় তোমার স্নেহমুগ্ধ পরশ আমাকে উন্মাদ করেছে। স্মৃতির কারাগারে তোমাকে ভিন্ন কাউকে ঠাঁই দিতে পারেনি মন। তোমাকে একটাও চিঠির প্রত্যুত্তর করিনি কেন জানো? হৃদয়ের সমস্ত অনুভূতি সঞ্চয় করে রেখেছিলাম আজকের দিনটির জন্য। আমি তোমার প্রথম প্রেম এবং শেষও বটে। তোমার এই ভালোবাসার কবচই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। আমি হাজার মন্দ হতে চাইলেও আমি তোমার কাছে তা হতে অক্ষম। তোমার শব্দর ক্ষমতায় আমার মতন পাষান হৃদয়ও বদলে গেলো। তোমাকে লিখবো ভেবেও কি বলে যে আমার বক্তব্য শুরু করবো ভেবে পাচ্ছি না। খালি ইচ্ছা করছে তোমাকে জড়িয়ে ধরে খানিক কাঁদি। কাছাকাছি বসে তোমার উষ্ণ অনুভূতি গ্রহণ করি। চিন্তা করো না আমি আর হারিয়ে যাবো না। আমরা আমাদের ভালোবাসার রঙে বিশ্ব বদলাবো। ইহকাল পরকাল জুড়ে তোমার আমার অটুট বন্ধন রইবে। ভীষণ ক্লান্ত আমি। আমি ঘুমোতে চাই তোমার কোলে মাথা দিয়ে। তুমি বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি কোনোদিনই বিভ্রান্ত হবো না বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার দ্বন্দে। আমাকে আবার আগের মতন ভালোবেসো। আমি ব্যাকুল হয়ে উঠছি তোমার আদরের জ্বরে। তোমার কণ্ঠে সেই বিরহর গানগুলো শুনে ঘুমিয়ে পড়তে চাই। তোমার ডায়েরির লুকানো কবিতাগুলো আবার পড়তে চাই। তোমার হাত ধরে সেই শহর চষাগুলো আবার ফিরে পেতে চাই। দেওয়ালের আড়ালে তোমার ঠোঁটের গভীরতায় ডুবতে চাই প্রিয়। আমি অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। তোমার অস্পষ্ট অনুভূতিগুলো শুনতে চাই। আমার ভীষণ কান্না আসছে। চিঠিতে শুধু নোনাজলের স্বাদ পাবে তুমি। তোমাকে ভালোবাসি এ হাজার বার বললেও হৃদয় শান্তি পায় না। জানি এই দুবছরের প্রতি রাতে বাঁধ ভেঙেছে তোমার কান্না। আজ ভীষণ অপরাধে নিজেকে শাস্তি দিতে ইচ্ছা করে। আমি আনন্দিত যে আমি আবার তোমার প্রেমে পড়েছি। তোমাকে যে ভালোবাসা এই দু’বছরে দিতে পারিনি তার শাস্তি স্বরূপ বাকিটা জীবন তোমার নামে সমর্পিত করতে চাই। সময়গুলো কাটতে চায় না কেন। অনেক ঋণ শোধ করার বাকি। আমাদের একত্রিত হওয়ার দিন জানিনা কবে আসবে। ঝড় শেষের নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে একটি মাস ধরে। আমাদের দেখা হবে তো প্রিয়! তোমার একটি মাস ধরে চিঠির অপেক্ষা করে করে আমি ভীষণ চিন্তিত। তুমি উত্তর দিও। অনুরোধ যোগাযোগ নিভিয়ে দিও না। তুমি কি চাও না আমি তোমার কাছে ফিরে আসি? আমি তোমার চিঠি বুকে রেখে রোজ ঘুমাই? জানি,তুমি ভালোবাসো এখনো,তবু কেন এমন পাষাণ হয়ে আজ থেকেও তুমি নেই?কেন তবে ভালোবেসেও ভালোবাসাহীনতার অনুভব করাও তুমি? জানি,ভালোবাসার এতো প্রমান পেয়েও আমি অন্ধ ছিলাম বলেই হয়ত আজ তুমি ক্ষুন্ন। কিন্তু এখন তো আমি বুঝতে পেরেছি, তবে কি ক্ষমা করে এ সম্পর্ককে আরেকটা সুযোগ দেওয়া যায় না প্রিয়? আমি যে তোমার জাদুময়ী নয়নে হারাতে চাই আবারো। অনুভব করতে চাই তোমার দীর্ঘশ্বাস,তোমার স্পর্শানুভূতি। শুষে নিতে চাই তোমার ঐ দীঘল চোখ থেকে ঝড়ে পড়া অশ্রুর নোনাস্বাদ অধরসুধায় মিশিয়ে। স্বার্থপরের মতো মুখ ফিরিয়ে যে যাতনা তোমাকে দিয়েছি,ভালোবাসার আদুরে আলাপনে প্রলেপ দিতে চাই সেই সকল ক্ষতে। ক্ষমা আর চাইব না, কষ্টগুলো সব ভালোবাসা দিয়ে মিটিয়ে দেব। তুমি কেবল হাতটা আবার ধরো। আদুরে স্বরে আবারো কাছে ডাকো। একটিবার শক্ত করে জড়িয়ে নাও বাহুবন্ধনে। একটিবার… এ চিঠির উত্তরও পাব না সে আমি জানি। তবে তোমাকে রোজ লিখবো যতদিন না তুমি আবারো ফিরতি চিঠির ভাঁজে আতরমাখা ভালোবাসা পাঠাও। যদি ছেড়ে যাও তবে ছেড়ে যাওয়ার আগে একটিবার ভেবো, আমার অস্তিত্ব কিন্তু তোমার মাঝেই। তুমিহীন আমি অনেকটা ঐ উবে যাওয়া কর্পূরের মতো। তবে উবে গেলেও ভালোবাসার দাবি নিয়ে তোমার অপেক্ষায় এ বাতাসেই মিশে থাকবে তোমার এই পথিক। পারলে ফিরে এসো হিয়ার মাঝে,আমার অস্তিত্ব হয়ে। এই অনুরোধেই আজ কলম থামালাম। ইতি, তোমার বিরহী সন্ন্যাসী |