একদিন গাছেরা উড়তে পারত
রাজদীপ ভট্টাচার্য
ছোটোবেলায় মামারবাড়ি যাওয়ার প্রধান আকর্ষণই ছিল ওই রহস্যময় বাগান। যদিও ভালোলাগার বিষয় সেখানে এতটুকুও কম ছিল না। অতবড় দালানওলা বাড়ি। পুরোনো আমলের আর্চ করা প্রায়ান্ধকার সিঁড়ি। দুপুরবেলার নির্জন পেটানো টালির ছাদ। রাতে বিছানায় শুয়ে কড়ি বরগা গোনা। চুপিচুপি পুকুরপাড়ে গিয়ে মাছ, গোঁয়াড়গেল, শ্যাওলাধরা কচ্ছপ দেখা। তক্ষকের ডাক শোনা। এমন কত কী! তাছাড়া এক-বাড়ি ভর্তি লোকজন। সবসময় হাঁকডাক। মানুষের আসা-যাওয়া। সবমিলিয়ে একবার গিয়ে পড়লে দিনগুলো জমে ক্ষীর হয়ে যেত। এজন্য ক্যালেন্ডারে দিন গুনতাম। আর গ্রীষ্ম কিংবা পুজোর ছুটি পড়লেই মায়ের কোমর ধরে ঝুলে পড়তাম মামারবাড়ি যাওয়ার বায়নায়। সেখানে পড়তে বসতে বলার কেউ নেই। সকালে ঘুম থেকে উঠে জলখাবার খাওয়া শেষ করেই শুধু সুযোগের অপেক্ষা। মা একবার চোখের আড়াল হলেই দালানের সিঁড়ি বেয়ে তিড়িংবিড়িং ছুট। খিড়কির দরজা পেরিয়ে ডানদিকে কাঁঠালবাগান আর ফলসাগাছ এবং বাম দিকে ছোটো ডোবার পাড়ে লিলি ও মানকচুর ঝাড়। এর মাঝে পায়ে-চলা রাস্তা দিয়ে দৌড়ে বাঁশের সাঁকো বেয়ে পার হলে একটা ছোট্ট চার-পাঁচ হাত চওড়া নালা। পেরোলেই বাম দিকে প্রকাণ্ড গাব গাছ ছাতার মতো ঢেকে রেখেছে চারপাশ। এরপর রাস্তা দুভাগ হয়ে গেছে। সোজা পথে পুকুরপাড়। আর বামদিকে গেলে বিরাট বাগান। দুপুরে সূর্য মাথার উপর ওঠা না অবধি সেখানেই নিজস্ব সাম্রাজ্য সামলাতাম। শীতের দুপুরবেলা খেয়ে উঠে দোতলার বারান্দায় বসতাম মেজোমামার সঙ্গে। পুরনো কাঠের আরামকেদারা পাতা থাকতো সারাক্ষণ। অন্য সময়ে সেই চেয়ারে শুয়ে দোল খাওয়া ছিল ভারি পছন্দের। কিন্তু দুপুরে চেয়ারের দখল থাকতো মেজোমামার কাছেই। ইস্কুলে পরীক্ষার খাতা নিয়ে বসত মামা। আমিও নেড়েচেড়ে দেখতাম। খাতা দেখার ক্লান্তিকালে দুজনের অনেক গল্প হত। চাষের জমি থেকে মেঠো খরগোশ ধরে আনার গল্প। গ্রামবাংলার খাঁটি ভূতের গল্প। আরও কত কী! ভারি আজগুবি কথাও বলত মেজোমামা। বলত, বাগানের পুরোনো গাছগুলো নাকি উড়ে যেতে পারে। আমার বিশ্বাস হত না। বলতাম, তুমি মিথ্যে মিথ্যে বলছ সব। আমাকে মিছিমিছি ভয় দেখাচ্ছ। মামা বলত, নিয্যস সত্যি কথা বলছি হে। পূর্ণিমা রাতে একদিন বাগানে গিয়ে দেখো। তাহলেই টের পাবে। —তুমি নিজে দেখেছ? মুখে অদ্ভুত ভঙ্গি করে মেজোমামা বলত, আলবাত দেখেছি। আয়ুর্বেদ ওষুধের কিছু পাতা, শেকড় – বাকড় কেবল রাতেই সংগ্রহ করতে হয়। সেজন্য মাঝে মাঝে আমাকে যেতেই হয় বাগানে। —গিয়ে কী দেখলে? সব ফাঁকা? —আরে না না। সব ফাঁকা হবে কী করে? গাছেরা তো মানুষের মতো স্বার্থপর নয়, যে সবাই মিলে বেড়াতে চলে যাবে। —কেন? গেলে কী হবে? —আরে বোকা, তাহলে পাখিরা থাকবে কোথায়? অত পোকামাকড়! —তাহলে কী করে? —কেন? মাঝে মাঝে কেউ কেউ বেড়াতে যায়। যেমন গত মঙ্গলবার রাতে গিয়ে দেখি জামরুল গাছটা নেই। জায়গাটা ফাঁকা ফাঁকা। —পরের দিন আবার চলে এসেছিল ঠিক? —হ্যাঁ, যেখানেই যাও ভোর হওয়ার আগে চলে আসতেই হবে। হতবাক হয়ে বসে থাকতাম এমন গল্প শুনে। আমার স্তম্ভিত শিশুমুখ দেখে মেজোমামা ফিক করে হেসে ফেলত। বলত, আমার কথা বুঝি বিশ্বাস হচ্ছে না! তবে নিজেই পরীক্ষা করে দেখতে পার। —আমাকে তো আর রাতে কেউ বাগানে যেতে দেবে না। কী করে পরীক্ষা করব? —আহা, রাতে ওরা বেড়াতে যায়। তা বলে দিনে কী নড়াচড়াও করে না! —করে? — হ্যাঁ রে বাবা করে। ধর শীতের সময় যেদিকে রোদ্দুর বেশি সেদিকে একটু সরে গেল। কিংবা বর্ষায় পুকুর ভরোভরো। তখন পাড় থেকে ফুট খানেক পিছনে চলে গেল। —কিন্তু আমি কী করে বুঝব ওরা সরে যাচ্ছে কিনা! —কেন, মেপে মেপে দেখবে। ধর দুটো গাছের মাঝে কতটা ফাঁক আজ পা দিয়ে মেপে রাখলে। আবার তিন – চার দিন পরে গিয়ে মাপো। ফাঁক বাড়ল না কমল! দুপুর গড়িয়ে যায়। পাকা চুল তুলে দিতে দিতে মেজোমামা কখন ঘুমিয়ে পড়ে। তখন গোটা বাড়িটাই চলে যায় ঘুমের দেশে। সারাদিন এত মানুষের রান্না-বাড়া করে উঠে মা, মাসি, দিদাও ক্লান্ত হয়ে দু-চোখ বুজেছে। আমি একতলায় নেমে আসি। ভেজানো দরজা নিঃশব্দে খুলে রোয়াকে পা রাখি। সিঁড়ি দিয়ে না নেমে একপাশে রোয়াকের গা ঘেঁষে হাত-পা ছড়ানো পুরোনো আতা গাছের মোটা গুঁড়ি জাপটে ধরে সরসর করে উঠোনে নেমে পড়ি। খিড়কির দরজা নিঃশব্দে পার করা মাত্র আমার পায়ে স্বাধীনতার ঘুঙুর বেজে ওঠে। সাথে সাথে বাগানে অসংখ্য পোকামাকড়ের চাপা শব্দ অদ্ভুত রহস্যের গন্ধ নিয়ে ধরা দেয় কানে। মরা পাতার মধ্যে দিয়ে একটা দাঁড়াশ সাপ পায়ে চলা রাস্তা পেরিয়ে হলুদ গাছের ঝোপে ঢুকে যায়। শীতের ফিকে আলোয় বাগানের গাছগুলোর দিকে তাকালে মনে হয় যেন তারা সবাই একদৃষ্টে আমাকেই দেখছে। জামরুল আর গোলাপজাম গাছের মাঝে এক-পা দুই-পা করে মাপি। আঙুলে কড় গুনে দেখি তেইশ পা। লিচু গাছ আর বোম্বাই আম গাছটারও মাপ নিয়ে রাখি। মাঝে একটা পিঁপড়ের বাসা থাকায় পায়ে দু-চারটে লাল পিঁপড়ে কামড়াতে শুরু করে। বাগানের নতুন পিয়ারা গাছ থেকে একটা কষ্টি পিয়ারা পেড়ে নিয়ে গিয়ে বসি পাশেই বাঙালদের মাঠে। দূরে একটা তালগাছ। বাবুই-এর পুরোনো দু-একটা বাসা এখনো পেন্ডুলামের মতো ঝুলছে। কয়েকটা গরু ঘাস খাচ্ছে মাঠের এখানে-ওখানে। শীতের বেলা দ্রুত পড়ে আসছে। মা ঘুম থেকে উঠে দেখতে না পেলে তুলকালাম করবে। ধীরে ধীরে বাগান পেরিয়ে ফিরে যাওয়ার পথ ধরি। শীত হোক আর গ্রীষ্ম হোক, আমরা গেলে একদিন পুকুরে জাল দেওয়া হয়। সে এক মহোৎসব। সকাল হতে না হতে জেলেরা চলে আসে। আমরা সবাই দলবেঁধে পুকুরপাড়ে জড়ো হয়ে মজা দেখি। জাল টানতে টানতে একদিকে নিয়ে আসে ওরা। আর জাল টপকে মাছেদের পালিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতা চলে। তারপর সেসব মাছ বাড়ির উঠোনে এনে ফেলা হয়। মাছেদের লাফালাফি পেরিয়ে সব ভাগাভাগি হয়। কিছু মাছ জিইয়ে রাখা থাকে বালতি – গামলায়। রাশি রাশি মাছ কেটে ধুয়ে নুন-হলুদ মাখিয়ে ভেজে ফেলা হয়। সারাদিন ধরে ভাতের বদলে মাছ ভাজা খাওয়া হতে থাকে আমাদের। সারারাত মা-মাসিদের কত গল্প আর শেষ হয় না। সেসব শুনতে শুনতে কখন ঘুমিয়ে পড়ি বুঝতে পারি না। মামাবাড়ি গেলে অধিকাংশ বিকেলে কোথাও না কোথাও যাওয়া হয়। কাছাকাছি বিয়ে হওয়া মাসিদের বাড়ি। মায়ের বান্ধবীদের বাড়ি। মামাতো দিদি সাথে সাথে ঘোরে। সেবার খবর পাওয়া গেল কাছেই কোন পাড়ায় যেন এক তারা মা’র ভর হচ্ছে প্রতি শনিবার করে। আর তখন সে ঝরঝরিয়ে ভবিষ্যতের সব কথা বলে দিতে পারে। আসন্ন বিপদেরও প্রতিকার হয়। মামাতো দিদি আর আমাকে নিয়ে মা চলল সেখানে। আধো অন্ধকার ঘর। ধূপ ধুনোর ধোঁয়ায় ভরা। লাল পাড় শাড়ি পরা এক রোগা শ্যামবর্ণা মহিলাকে ঘিরে কয়েকজনের জটলা। সামনে তারা মা’র ছবিতে সিঁদুর লেপা। সবার সঙ্গে সাধারণ কথা বলতে বলতে হঠাৎ মাথা নুয়ে পড়ল মহিলার। সবাই জয়ধ্বনি দিয়ে উঠল। মাটিতে কয়েকবার কপাল ঠুকে উঠে বসল সেই মহিলা। তারপর এলোমেলো খোলা চুল উড়িয়ে মাথা ঘোরাতে লাগল ক্রমাগত। একটু স্থির হলে সবার সমস্যা একেএকে শোনা শুরু হল। বিকৃত চাপা স্বরে প্রতিবিধান বলাও চলতে লাগলো। আমার মা’র পালা এলে স্বামীর বন্ধ কারখানার ভবিষ্যৎ জানতে চাইল তার কাছে। হাত তুলে জানালো – হবে হবে। কানের কাছে মুখ এনে কিছু বলল মা-কে। ঠিক শুনতে পেলাম না। কাঁসার থালায় দক্ষিণা রেখে আমরা উঠে পড়লাম। প্রতিবিধান রূপে একটা লোহার ছোট্ট ত্রিশূল নিয়ে ফিরল মা। রোজ তাকে যথাবিহিত পুজো করেই নাকি খুলে ফেলা যাবে লকআউট হওয়া কারখানার তালা। দিন তিনেক পরে জামরুল আর গোলাপজাম গাছের দূরত্ব মাপতে গিয়ে দেখি বাইশ পা হল। তাহলে আগের দিন কি পা একটু ছোটো ছোটো ফেলেছিলাম? নাকি সত্যিই গাছ সরে এসেছে এরমধ্যে। মেজোমামার কথাই তাহলে সত্যি? সন্দেহ বুকে চেপে ফিরে এসে মামাকে জানালাম ব্যাপারটা। মামা বলল, মাত্র এক পা! আরও অনেক বেশি সরে আসে সময় সময়। আসলে এখন শীত কাল। গাছেরাও একটু অলস হয়ে গেছে ঠান্ডায়। গ্রীষ্ম কালে দেখবি আবার। একেবারে অবাক হয়ে যাবি। অবাক হবার দিন পেরিয়ে কবে ধীরে ধীরে বড় হয়ে গেলাম। অনবরত মামারবাড়ি যাওয়ার দিনও ফুরিয়ে গেল। দাদু – দিদা পরপর যখন মারা গেল তখন আমি কলেজে পড়ছি। ব্যস্ততার জন্য যাওয়া হয়নি আমার। আবার যখন যাওয়া হল তখন পড়াশোনা শেষ করে চাকরিতে ঢুকেছি। চাকরি বলতে স্কুলমাস্টারি। তাও বাড়ি থেকে বেশ দূর। রোজ সকাল হতে না হতে রেডি হয়ে বেরোনো। আবার সন্ধের পরে বাড়ি ফেরা। তাই আত্মীয়-স্বজনের সাথে যোগাযোগ নামমাত্র। মেজোমামার সেরিব্রাল অ্যাটাক হওয়ার খবরটা যখন আমরা পেলাম তখন আমার স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি চলছে। তাই মা-ও বলল বারবার, একবার যা। মানুষটা এত ভালোবাসত। তোকে দেখলে খুশি হবে। আমারও ভিতর থেকে একটা ইচ্ছে হল। তাই ব্যাগে অসুস্থ মানুষের জন্য ফলমূল নিয়ে চললাম মামারবাড়ি। স্টেশনে নেমে খানিকটা অবাকই হলাম। সব চেহারা – ছবি বদলে গেছে। সেই গ্রাম্য পরিবেশের কণামাত্রও আর কোথাও লেগে নেই। স্টেশন থেকে মামারবাড়ি মিনিট দশেকের পথ। রিক্সায় চেপে বসলাম। রাস্তা পাকা হয়েছে। পথে যত ফাঁকা মাঠ ছিল এখন বসতিতে ভরা। শিয়ালদহ থেকে দক্ষিণে কলকাতা শহর যেন শেষ কয়েক দশকে উল্কার গতিতে এগিয়ে গেছে। আমাদের উত্তরে পরিবর্তন হয়েছে, তবে তা এত তীব্র নয়। রিক্সাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলাম, দাদা এই পথে একটা পঞ্চানন তলা ছিল যে, সেটা আর নেই? —আছে গো দাদা, আরেকটু গেলিই দেখতি পাবেন। তবে তার চেহারা-ছবি পালটি গেছে। খানিক এগোতে চোখে পড়ল। সেই প্রাচীন অশ্বত্থ গাছটাও আছে এখনো। চারপাশ থেকে বাড়িঘরের জঙ্গল তাকে ঘিরে ধরেছে। সেই সবুজ স্নিগ্ধ পরিবেশ আর নেই। তবু একটা পুরনো চিহ্ন দেখে নিশ্চিত হলাম যে ঠিক পথেই যাচ্ছি। নাহলে এতক্ষণ রিক্সায় বসে নিজেরই সন্দেহ হচ্ছিল! একসময় মামারবাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়াল রিক্সা। নেমে ভিতরে ঢুকলাম। বাড়িটা এখনো একইরকম আছে। উঠোনে কয়েকটা এসবেস্টসের ঘর উঠেছে। সেখান থেকে অচেনা মানুষ উঁকি দিয়ে জিজ্ঞাসু চোখে দেখছে আমাকে। ভাড়াটে হবে বোধহয়। অনেক দিন পরে চেনা মানুষদের সাথে দেখা হল। মামা ঘুমিয়ে আছেন। পরে কথা হবে। চা খেয়ে মাইমাকে বললাম, একবার বাগানের দিক থেকে ঘুরে আসছি আমি। মাইমা বললেন, সেসব কী আর কিছু আছে বাবা। সব বিক্রিবাটা হয়ে গেছে। যাও তবু দেখে এস। খিড়কির দরজা পেরুতেই দেখলাম আমি অন্য একটা জগতে এসে পড়েছি। আমার সামনে একটা পাড়া। প্রায় কুড়ি – পঁচিশটা ছোট বড় বাড়ি উঠেছে। নতুন রাস্তা হয়েছে। সেখানে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করলেই আমি দেখতে পাচ্ছি সেই জামরুল গাছ, গোলাপজাম, পাটালি আমের গাছ, বোম্বাই, লিচু গাছ আরও কত ছোট বড় ঝোপঝাড়। সেসবের একপাশে লম্বাটে সেই পুকুর। আর চোখ খুললেই সারি সারি বাড়ি। বাড়ির সামনে পাঁচিল। লোহার গেট। তারে রংবেরঙের জামা-কাপড় শুকোচ্ছে। মনে মনে ভাবলাম, না এলেই ভালো হত। তবু মেজোমামার সঙ্গে দেখা হবে একথা ভেবে কোথাও একটু আনন্দ হল। আর বেশিদিন বাঁচবে না মনে হয় মানুষটা। ফিরে রোয়াকে উঠতে উঠতে মাইমা বললেন, মামা উঠে পড়েছে। তোমার কথা বললাম। খুব আনন্দ পেয়েছে। যাও দেখা করে এস আগে। ভিতরের ঘরে আধো অন্ধকারে শুয়ে আছে মেজোমামা। শরীরের একদিক পুরো অচল হয়ে গেছে। কশ দিয়ে লালা পড়ে ভিজে আছে গাল। আমাকে দেখেই এক গাল হাসতে গেল। আর মুখটা কেমন বিকৃতি নিলো। ডান হাত তুলে মাথায় ঠেকাল আমার। মাইমা পিছন থেকে বলল, তোমার ভাগ্নে এসেই বাগান দেখতে গিয়েছিল। বেচারা এতদিন পরে এসে নিশ্চয়ই দুঃখ পেয়েছে খুব। মেজোমামার চোখেও বেদনার ঢেউ। মানুষটার বরাবর পুজো-আচ্চায় মন। ওই পুকুরে ডুব দিয়ে বাগান থেকে ফুল-ফল সংগ্রহ করে এসে আগে পুজোয় বসতেন। এখন সব শেষ। মামার অসুস্থতার কারণ যেন স্পষ্ট দেখতে পেলাম আমি। বললাম, সব অত বড় বড় গাছ… কোথায় হাপিশ হয়ে গেল মামা? ঘড়ঘড়ে গলায় কাঁপা অস্পষ্ট স্বরে কীসব বলে উঠল মেজোমামা। ভালো বুঝতে পারলাম না। ডান হাত তুলে করতল নাড়িয়ে দেখাল। এবার স্পষ্ট বুঝলাম, বলছেন – সব উড়ে গেছে… উড়ে উড়ে অনেক দূরে চলে গেছে। মেজোমামার চোখ ছাপিয়ে গড়িয়ে নামছিল জলের ধারা। |