রঞ্জনা ভট্টাচার্য

রঞ্জনা ভট্টাচার্যর কবিতা

বোধের জন্য শোকস্তব
 
ও ধরে ফেলেছিল আমার বোধ নেই,
অথচ আমি দরজার পর্দা ধরে দাঁড়ানো
বাচ্চাটার গা থেকে বেরিয়ে আসা
বেহালার সুর শুনেছিলাম, স্পষ্ট এবং সত্যি।
মদানো সূর্য ও হাতাকাটা মেঘেরা
প্রায়শই আমার মেচেতার উপর চুমু দিয়ে
যায় আর আমি হাঁটতে থাকি, হাঁটতে থাকি
কালো গমগমে পিচ রাস্তায়
ভাবি একটু এগোলেই কলমি শাকের ক্ষেত পাব,
দিনের শেষে সংসারের গন্ধে খিদে পাবে আমার
প্রেমের।
তেমন কিছু ঘটে না,
দরজায় দরজায় বিক্রি করার পর এক গ্লাস
জলের মধ্যে পক্ব কেশ ছবি ভেসে ওঠে,
মৃদু হেসে জিজ্ঞাসা, ‘বেশ তো?’
তখন ওরা ভাবে আমার ঠিক বোধ নেই,
তাপে চাপে ব্রেনের স্থান পরিবর্তন, 
ভকভক করে ব্রেন থেকে ড্রেন ড্রেন গন্ধ
ওরা পায়, নাক চাপা দিয়ে সরে যায় বমি বমিভাব
আমার ধীরে ধীরে বোধহয় আমার বোধ নেই।
নরকের গন্ধ তখনও চুলেতে লেগে,
ও বলেছিল, ‘বেচারি, যেতে দাও।’
যেতে যেতে বুঝলাম
আমার ব্রেনের মধ্যে আসবাবেরা সেজেগুজে
আছে,
রাক্ষস চিরুনি, থেমে যাওয়া ঘড়ি এবং এস্রাজ
এবং নাগচম্পা ফুল…
এলোমেলো নয়, অতীত আমার কিছু
বিচিত্র শখ এমনই আলগোছে ফেলে রেখে গেছে।
আমার মুখে লাঙল কেটেছে যে রাত-দিন,
তারাও বোধের জন্য নিয়ে এসেছিল রোগীশয্যা,
বলেছিল, ‘কোথায় কষ্ট?’
আমার বেচারা বোধ, শুশ্রূষা চেনেনি কোনদিন।
 
রোমাঞ্চিত পাকাচুল দূরকে দেখেছিল বোধের
মৃত্যুর ঠিক আগে, বোধের মৃত্যুর ঠিক আগে
সৌন্দর্য ঠিকানা বদলে ফেলে,
ও বলেছিল বোধের দরজায় কেউ পেরেক ঠুকে
রেখে গেছে,
আমি তো তখনও ধেনো মদ ঢেলেছি তার গালে,
আমি চিৎকার করে কাঁদতে গিয়ে দেখি সে
কোথাও নেই,
সমস্ত কান্না সাথে নিয়ে চলে গেছে দুয়ারে দুয়ারে
ফেরিওয়ালা,
এই তো মৃত্যু ছিল, বোধ ছিল না,
এই তো বোধ আছে, মৃত্যু নেই,
এই তো বোধ নেই, মৃত্যু নেই,
পড়ে আছে শোকগাথা
   ‌           আর ‘ডানাভাঙা দেবদূত’।

Leave a Reply