মৌলীনাথ গোস্বামীর দুটি কবিতা
সন্দীপ দত্ত প্রবাদ যখন চিতায় ওঠে মানুষ এইভাবেই কাঁদে… শব্দনাভি পোড়ে না তার হাত ছাড়িয়ে অগ্নিশিখার অমরত্বের চৈতি হাওয়ায় তাকিয়ে দেখে কলেজ স্কোয়্যার— গ্রিক পুরাণের অ্যাটলাস নয় জানি না সে আমার কে হয় নিবিড় ঘুমে তখনও তার কাঁধে লিটল ম্যাগের পাহাড় টেমার লেনের বন্দরগার কাটিয়ে মায়া শেষযাত্রার ছাড়ল জাহাজ শব্দ নাহি অশ্রুকীর্ণ সসাগরা সন্দীপে সন্দীপে— প্রবাদ যখন চিতায় ওঠে শব্দেরা এইভাবেই কাঁদে… কোনও তরুণ কবির লাশকাটা ঘরে সে তো চলে গেল অচেতন রজনীগন্ধার মালার হেমন্তচিতায় শুয়ে আঙুলে ব্যর্থ খড়ির দাগ গলায় দড়ির দাগ শয্যার চারপাশে খই-খেউরের প্রগলভ প্রশান্তি তাই নয় কি? পাওয়া না পাওয়ার অনেক অনেক ঊর্ধ্বে সকলের অজ্ঞাতসারে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে আজ গলায় দড়ির দাগ! এই দাগ থেকেই তো বেরতে চেয়েছিল সে রজ্জুতে সর্পভ্রম করেনি তার সুকুমার বিচক্ষণ বোধ মনে হয়েছিল, ছিঁড়ে ফেলতে হবে পৃথিবীর সকল দড়ির ফাঁস সর্পপাশ তবু তাকে গিলে খেতে এসেছিল বুঝি রোজকার লেখার টেবিল ল্যাপটপ, গল্পের প্লট, কবিতার ভ্রূণের মিছিল? মৃত্যুর ইস্তেহার মগজের ভেতর স্লোগানের মতন সোচ্চার উঠে এলে এই ছবি ভেসে ওঠেনি কি মনে তার— বাতিল পেনের মতন সে শুয়ে আছে স্থির আর তার কল্পনার দোয়াতে কালি নেই, অসমাপ্ত চরণের শেষে হাততালি নেই স্বপ্নের ওইপারে আলোবান্ধব কোনও রোদ নেই এপারে কবিতার প্রসবব্যথা জুড়াবার ধাইমা জোছনা নেই জানি না কোনটা বেশি কাঙ্ক্ষিত ছিল— বিষণ্ণ গন্ধের মাঝে এইভাবে এই শুয়ে থাকা, নাকি চলে যাওয়া অনেক টুকরো চাঁদতারাদের খড়কুটো রাতের উনুনে গুঁজে আগুনের ফুলকির অপেক্ষার অতিষ্ঠ পায়চারি ফেলে ফেলে রেখে সদ্য হামা দিতে শেখা কিছু শব্দের সন্তান অথবা সন্তানসন্ততি, একান্ত একান্ত তার নিজস্ব ঘরানার একদিন বড় হয়ে যারা সক্কলে কবিতার শতাব্দী হবে পয়ারে, অনুষ্টুপে অথবা সনেটের ঋতুসজ্জায় যাদের সে সাজাবে ভেবেছিল ভেবেছিল বৃত্তের নিটোল ছাঁচে ঢেলে দেবে, ভাঙবে, জুড়বে, জুড়াবে অক্ষর দিয়ে পুতুল খেলবে শব্দের নতুন ঈশ্বর… এইসব নিশ্চয় মনে কোনওদিন ভালোবেসে ভেবেছিল সে ভেবে দেখো, এতকিছু ঘটে যাওয়ার পরও সে শুয়ে আছে শব্দের নদী নেই প্রতিটি অন্ত্যমিল নিঃশ্বাসের শেষে নাড়ির স্পন্দন নেই দড়িটা এখনও আছে, দাগ রেখে গেছে এই দড়িখানা ছিঁড়েবে বলেই সে একদিন কবিতা লিখতে বসেছিল কবি নামের অসামান্য রজ্জু গলায় দিয়েই সে আত্মহত্যা করেছিল! |
অসামান্য কবিতা লিখেছিস মৌলী, মৌলীনাথ গোস্বামী…