ধার
মৈত্রেয়ী ব্যানার্জি
শালগাছের নিচে দাঁড়িয়ে উত্তরদিকে মুখ করে অন্যমনস্ক দেবল নাক খুঁটছিল খুব মন দিয়ে। কিছু পুরুষ মানুষ থাকে যারা অন্যমনস্ক হলেই নাক খোঁটে এবং খুব মন দিয়ে খোঁটে, দেবল সেইরকম। মনে হয় যেন অনেক ধনরত্ন গুহার অভ্যন্তর থেকে বেরিয়ে আসবে, তাই খননকার্য চলতে থাকে। উত্তরদিকের পুকুরে টলটলে জলে মৃদুমন্দ হাওয়ায় জলে ছোট ছোট ঢেউ এসে পাড়ে লাগছে। দেবল নাক থেকে কিছু বের করে হাতে নিয়ে দু-আঙুলে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে গোলা তৈরি করল মিনিট খানেক ধরে, তারপর আঙুলের ডগায় সেটি নিয়ে টিপ করে ছুড়ে দিল পদার্থটি। কিন্তু আঠালো গোলাটি নিক্ষিপ্ত না হয়ে আঙুল আঁকড়ে বসে রইল। তখন দেবল সেটি শালগাছের গায়ে মুছে পকেট থেকে সিগারেট বের করে ধরাল।শালগাছ যথেষ্ট বিরক্তি প্রকাশ করে বেশ কয়েকটি পাতা ওর মাথায় ঝরিয়ে রাগ প্রকাশ করে ক্ষান্ত হল। বেচারা আর কিই বা করতে পারে! চলে ফিরে তো আর বেড়াতে পারে না যে সরে যাবে! তাহলে তো মানুষের মতো বেইমান জাত ওদের সবংশে ধ্বংস করতে এলেই ওরা পালাতে পারত। শালগাছ জানে দেবল যে সিগারেটটি খাচ্ছে সেটিও তার বাপের পয়সায়। যাহোক করে বি কম পাস করে শুধু পুকুরে ছিপ ফেলে বসে থাকা আর বিনামূল্যে ছাগলের পাল চড়ানো। দু-একটা টিউশনিও তো করতে পারিস! শালগাছ বিরক্তির মাথা দোলায়। সাইকেলটা বাঁশের মাচার গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড় করিয়ে সৈকত হাঁক পাড়ে “চা দাও কাকা! সঙ্গে একটা ডিম ভেজে দিও। শালা সেই সকালে বেরিয়েছি। ক্ষিদেয় পেটে ছুঁচো ডনবৈঠক মারছে। কৈ গো কাকা হল?” হারান ওর মুখের কাছে চায়ের ভাঁড় রাখে। পূর্ণিমা উনুনে প্যান চাপিয়ে ডিমের গোলা ছাড়ে, ছ্যাঁক! সারা হাট ডিম ভাজার গন্ধে ম ম করে। সৈকত ভাঁড়ে চুমুক দিতে দিতে পূর্ণিমার সরু কোমর আর ভরন্ত ঘামে ভেজা বুকের খাঁজে চোখ রাখে। এ অঞ্চলে চায়ের দোকান এই একটিই। আর একজন মহিলা মোটামুটি ভোর থেকে সকাল দশটা পর্যন্ত আবার বিকেল সাড়ে চারটে থেকে রাত সাতটা পর্যন্ত দোকানে থাকে। পূর্ণিমা, হারানের বোন। হারানের বৌ চিররুগ্ন। সকালে উঠে নড়তে চড়তে তার আধ ঘণ্টা সময় লাগে। ততক্ষণে পূর্ণিমা বাসিকাজ সব সেরে ঠাকুরকে জলবাতাসা দিয়ে দাদার সঙ্গে বেরিয়ে যায়। এবার বাড়ির যেটুকু রান্না বা টুকিটাকি কাজ হারানের বউ করে। ওদের কোন ছেলেমেয়ে হয়নি। তার জন্যে হারানের কোন আক্ষেপ নেই। চারদিকে ছেলেমেয়েদের দেখে ওর নিজের সন্তানের ইচ্ছে আর জন্মায় না। ওরা কোনদিন ডাক্তারের কাছেও যায়নি। তাই কার জন্যে ওরা বংশধর পেল না সেটাও জানা হয়নি। তবে তাতে এলাকার মুখ বন্ধ হয়নি। কেউ বলে হারানের বৌ রুগ্ন তাই বিয়োতে পারেনি। আবার একদল মুখ মুচকে হারানের পুরুষত্বের দোষ দিতেও ছাড়ে না। তবে যাদের নিয়ে মাথাব্যথা তারা কিন্তু দিব্যি আছে। বোন পূর্ণিমাই ওদের কাছে এখন সন্তানের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। হারানের বৌ বাসন্তী তো পূর্ণিমা চোখের আড়াল হলে চোখে আঁধার দেখে। আজ হাটবার। সুখেন মুরগি নিয়ে প্লাস্টিক পেতে বসার আগেই বঁটিটার ধার ঘষে ঘষে বাড়িয়ে নিতে নিতে এদিক-ওদিক তাকিয়ে মাপছিল। সুখেনের বয়স বেশি নয়। জোর ষোলো কী সতেরো হবে। এই বয়সেই রোজগারের তাগিদে রোজ হাতে রক্ত মাখতে মাখতে অভ্যেস হয়ে গেছে। আজ হাটবার হলেও ভিড় তেমন চোখে পড়ছে না। তবে চায়ের দোকানে ভিড় ঠিক আছে। আগে যারা এক ভাঁড় চা খেত, পূর্ণিমাদি আসার পর থেকে তারা দু-তিন ভাঁড় চা খায়। এছাড়া ডিমের পোচ খাবার লাইন লাগে এখন। গ্রামের মানুষ অমলেট, মামলেট বোঝে, কিন্তু পোচ বোঝে না। পূর্ণিমাদি এত সুন্দর পোচ করে, ওপরে ডিমের কুসুমটা টলটল করে অথচ গলে যায় না। লোকে এটাই তাড়িয়ে তাড়িয়ে খায়। সৈকত আজও টাকা না দিয়ে চলে যাবার তালে ছিল। পূর্ণিমা কাজ সামলাতে সামলাতে চেঁচিয়ে বলল, “আজ নিয়ে পাঁচ দিনের টাকা বাকি, পঁচাত্তর টাকা, আজ না দিলে কাল থেকে আর চা পাবে না সৈকতদা।” “বাবা! তোর কথার ধার তো খুব রে!” বলতে বলতে বাইক থামিয়ে বিশুবাবু এগিয়ে এসে একটা একশ টাকার নোট এগিয়ে দেন। “রেখে দে, ফুরিয়ে যাবার আগেই আবার পেয়ে যাবি। সৈকত আমার দলের ছেলে। হারান, বোনকে একটু মিষ্টি মুখে কথা বলতে শেখাতে পারিস না?” হারান কোন উত্তর করে না। একসঙ্গে প্রাইমারি স্কুল দুজন পাশাপাশি বসে কাটিয়ে এসেছে। এখন দূরত্ব অনেক। হারান চায়ের দোকানি আর বিশুবাবু স্থানীয় এম এল এ। সাড়ে দশটা নাগাদ পূর্ণিমা দাদাকে বলে নিজের ব্যাগ আর ছাতা নিয়ে বেরিয়ে আসে। কটি গরীব ছেলেমেয়েদের নিয়ে ওর একটা নিজস্ব জগৎ আছে। সেখানে ও পড়ায়, গান শেখায়, যে যেরকম পারে আঁকতে শেখে, হাত পা নেড়ে নাচতেও শেখে। আরও দুজন আছে ওকে সাহায্য করার, দেবল আর প্রিয়া। টাকাকড়ি কিছু আসে না। কেউ কেউ হয়ত কোন মাসে কিছু দেয়, নাহলে বাড়ির কলা, মুলো, শাক এসব এনে দেয়। তবু কিছু সময় এদের সাথে কাটাতে না পারলে শান্তি নেই ওদের। যারা স্কুলছুট, সাধারণত তাদের নিয়েই ওদের এই চেষ্টা। মিড ডে মিলে ডিম পাবার লোভে কিছুদিন এরা যায়, তারপর আর ভাল না লাগলে যায় না। ওদের বাপ মাও জোর করে না। বলে, “কী হবে গো অত ল্যাখাপড়া শিখে? ট্যাঁকস ট্যাঁকস কথার ধার বাড়বে শুধু, লয়!” তবে পূর্ণিমা, প্রিয়া আর দেবলের “শাল পিয়ালের ঘরে” পাঠাতে আপত্তি করে না। তার কারণ এটাও ঠিক যে ছেলেমেয়েরা নিজেরাই এখানে আসতে পছন্দ করে। খেলার ছলে পড়তে ওদের ভাল লাগে। আর ভাল লাগে দেবলের সঙ্গ। দেবলদাদার ধরনধারণ সব ওদেরই মতো। ওদের সঙ্গে খেলা, পুকুরে ঝাঁপ, কাদা দিয়ে মূর্তি তৈরি করা সব দেবলদাদার হাত ধরে। শাল পিয়ালের ঘর নামটাও দেবলদাদার দেওয়া। ওরা ভয় পায় পূর্ণিমাদিদিকে। একবার চোখ বড় বড় করলেই ওরা গুটিয়ে এতটুকু হয়ে যায়। পুকুরের ধারে এসে পূর্ণিমা ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “আবার তুই নাকে হাত দিয়েছিস! যা, হাত ধুয়ে আয়। নোংরা ছেলে একটা!” দেবল বোকা হেসে পুকুরে নেমে হাত ধুয়ে আসে। “জানিস, সৈকত আবার ওরকম নোংরা চোখে দেখছিল। আবার বিশুর দলে নাম লিখিয়েছে। দ্যাখ না, ওর বাড়িঘর সব পাল্টে রাজপ্রাসাদে পরিণত হবে।” দেবল হাসে, বলে, “সবই মায়ার খেলা। চল।” “হ্যাঁ। ওইজন্য তোর কিছু হলো না, আর ক্লাস নাইন ফেল করে ওরা গাড়ি হাঁকাবে।” কিছুদিন আগের সেই নোনাধরা স্যাঁতসেঁতে বাড়ি দৃষ্টিপথের আড়ালে চলে গেছে। তার বদলে সামনে উঠেছে ঝাঁ চকচকে তিনতলা বাড়ি। সামনে বিরাট খোলা বারান্দা, তাতে পাড়ার চাকরি না পাওয়া ছেলেগুলো বসে ক্যারাম পেটাচ্ছে, হল্লা করছে, মাঝে মাঝে খিস্তি দিচ্ছে। আবার নিজেরাই সতর্ক হয়ে বলছে “এই চুপ! চুপ! দাদা শুনতে পাবে!” দাদা অর্থাৎ বিশ্বেশ্বর। এম এল এ হয়ে মূলবাড়ির সামনের জমিতে এই প্রাসাদ গড়ে তুলেছে। গ্যারাজে দুটি গাড়ি। বাতি লাগানো। বিশ্বেশ্বরের বুড়ো বাপ মা পুরোনো বাড়িতেই থাকেন। বিশু তাদের আনতে চেয়েছিল, তাঁরাই আসেননি। বিশুর বাবা ছিলেন প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তিনি সেদিনও যেভাবে বাঁচতেন আজও সেভাবেই থাকতে চান। বিশুর এই উত্থান তাদের খুশি করতে পারেনি। বিকেলে দুজন পাশাপাশি বসে বিড়বিড় করেন “অনভ্যাসের ফোঁটা চড়চড় করে গিন্নি। এত বাড় বোধকরি ভাল নয়।” গিন্নি চুপ করে থাকেন। নতুন বড়ির পিছনেই পুরোনো বাড়ি। বেশ কিছু মাস অতিক্রান্ত। সৈকতের টু-হুইলার এখন এলাকা দাপিয়ে রাজত্ব করে। হারানের চায়ের দোকানে সে রোজ আসে। আগে টাকা বাকি থাকত, এখন আগেই নগদ টাকা জমা রেখে দেয়। আগের মতোই পূর্ণিমার ঘামে ভেজা দেহের আনাচেকানাচে চোখের চেরা জিভ বোলায়। আর ঠিক ওর মত করে সুখেন সৈকতের টু-হুইলারে হাত বোলায়। হাত বোলাতে বোলাতে সুখে ওর চোখ বুজে আসে। সে দিবাস্বপ্ন দেখে সে এই যানের একমাত্র আরোহী। হঠাৎ মাথায় খটাং করে গাঁট্টা পড়ে। “আবে! বা***! এমন ভাবে হাত বোলাচ্ছিস যেন কোন ডবকা মেয়েছেলের ****হাত বোলাচ্ছিস!” মাথার ব্যথায় উফ্ করে চোখ খুলে দেখে সামনে সৈকত। দাঁত বের করে হাসছে! সুখেনও হাসে। মনে মনে বলে ঢ্যাম*! শালা! দাঁড়া, একদিন আমারও দিন আসবে। মুখে হেঁ হেঁ করে। “একটু টাটকা মাংস দিই? “ “দিবি? তা দে, ওই ওইটা কাট! বেশি ছটফট করছে যে! “ বঁটিতে ধার পরীক্ষা করে মুরগির দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় সুখেন। বাইকে হেলান দিয়ে ঠোঁট চাটে সৈকত। হঠাৎ রাস্তার ওদিক থেকে দেবলকে আসতে দেখে সৈকতের চোখ দুটো জ্বলে ওঠে। একবার আড়চোখে চায়ের দোকানে পূর্ণিমাকে দেখে। দেখে, পূর্ণিমা ব্যাগ কাঁধে তুলে তৈরি, মানে ওই ঢ্যাম***র সঙ্গে এখন খেলা হবে। পাঠশালা পাঠশালা খেলা। মটকা আগেই গরম ছিল। ক্যাবলাটাকে দেখে আরও চিড়বিড় করে উঠল। রাস্তার ওদিকে গিয়ে ইচ্ছে করে দেবলকে ধাক্কা মারল সৈকত। দেবল মুখ থুবড়ে পড়ে রাস্তায়। তারপর জামা ঝেড়ে উঠে বলে “শুধুশুধু ধাক্কা মারছিস কেন?” “বেশ করব। তুই রোজ মাগী নিয়ে ফুর্তি মারবি। আর আমি আঙুল চুষবো! আমাকে কি গা**পেয়ে ছিস!” “মুখ সামলে সৈকতদা। তুমি ভেবোনা, পার্টি করছ বলে তোমায় আমরা ভয় পেয়ে চলবো।” পূর্ণিমা এসে দাঁড়ায়। সৈকতের মুখে অশ্লীল কথার বন্যা বইতে থাকে। কিছুক্ষণ পরেই সৈকতের ফোন বেজে ওঠে। জোঁকের মুখে নুন পড়ার মতো সৈকত” দেখে নেব! “বলে বাহনে চেপে বসে। হালকা ভিড় চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। যেন তেমন কিছুই হয়নি। কিন্তু ভিতরে ভিতরে সকলের একটা দমবন্ধ ভাব কাজ করে। এমন তো ছিল না কিছুকাল আগে! এখন কেন এত পরিবর্তন! যারা ভাবার তারা ভাবতে ভাবতে বাজার হাট করে, বাড়ি ফেরে, খায়, টিভি দেখে, কিন্তু মাথায় একটা জট পাকিয়ে থাকে। ওদিকে সুখেন বঁটির রক্ত মুছে মাংসটা সরিয়ে রাখে। কে জানে! কাটা মাংস বিক্রি হবে কিনা! আরও কয়েক মাস কেটে গেছে। শাল পিয়াল চলছে এখনও। সৈকতের দাপট একইরকম আছে। ভোট আসছে। কাজের চাপ খুব। সুখেন আজকাল মাংস বিশুর বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসে। সেসময়টা কেউ মাংস কিনতে এলে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় খানিকক্ষণ। গেঁতো দেবল পূর্ণিমার আর প্রিয়ার ঠেলা খেয়ে আজকাল নানা জায়গায় চাকরির চেষ্টা করছে। যদি লেগে যায়। তবে ওর মন চাকরি করতে চায় না। তবু বাড়ির লোক আর বন্ধুদের কথা রাখতে সে চেষ্টা শুরু করেছে। আজ মাংস নিতে সুখেনের কাছে যেতে সুখেন একটা অদ্ভুত কথা বলে। বলে, “তোমাকে বিশুদা ডাকছিল। তুমি তো ভাল আঁকো। তাই ভোটের আগে কী সব আঁকতে হবে। ভাল টাকা দেবে…।” দেবল যদিও ঘেন্না করে বিশ্বেশ্বরকে, কিন্তু এঁকে যদি কিছু টাকা রোজগার হয়… ভাবনাটা ঘুরতে থাকে মাথায়। আর ভাবলেই নাকে হাত চলে যায় দেবলের। পূর্ণিমাকে একবার জিজ্ঞেস করতে পারলে ভাল হতো। না, দেবলের বিশুর কাছে যাওয়া হয়নি, পূর্ণিমা বা প্রিয়া দুজনেই আপত্তি জানিয়েছে। কিন্তু তারপরেও ফোন এসেছে, বিশু নিজে ফোন করে যেতে বলেছে। এরপরে না গিয়ে উপায় আছে! ভোরবেলা ঘুম ভেঙে পুকুর পাড়ে গিয়ে নাকে হাত দিয়ে একটু ভাবার চেষ্টা করছিল দেবল। কিন্তু হতচ্ছাড়া কাক দিল মাথায় হেগে। বিরক্ত দেবল পুকুরে নামতে গিয়ে কেঁপে উঠল। পুকুরে উপুড় হয়ে ভাসছে একটা লাশ! খানিকক্ষণ কাঁপার পর মাথাটা একটু পরিষ্কার হতে ভাল করে চেয়ে দেখল সে। এত সৈকত! হ্যাঁ। সৈকতই। কারণ এই রঙের টিশার্ট কদিন আগেই ওকে পরতে দেখেছে দেবল। আরও ভাল করে খেয়াল করে দেখল পুকুরের ঠিক পাড়ে রয়েছে চাপ চাপ রক্ত! আর কাচের বোতল, মদের, খালি। চুপচাপ নিঃশব্দে ফিরে আসে ঘরে। মা জিজ্ঞেস করে, “কি রে! মুখ শুকনো কেন? পেট কামড়াচ্ছে?” দেবল ঘাড় নাড়ে। মা রান্নাঘরে চা করতে যায়। এতদিনের বন্ধু বা শত্রুর এভাবে বিদায় মেনে নিতে পারছে না দেবল। কয়েকঘণ্টার মধ্যেই লোকে লোকারণ্য। পুলিশ, মিডিয়া, গাড়ি, এম এল এ, কান্না, চিৎকার। বিশু জোরে জোরে বলছেন বিরোধী দলের কাজ এটা। তার দলের ছেলেকে এভাবে মেরে দেওয়া তারা মেনে নেবে না। বিরোধীদলের দুটি ছেলেকে তুলে নিয়ে গেল পুলিশ। একদিন বাজার হাট নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকল। চায়ের দোকানে ভিড় হল যথেষ্ট। তবে সবাই ফিসফিস করে আলোচনার বেশি এগোল না। ভয়ে হতে পারে, বা কিছুটা স্বস্তিতে হতে পারে। হত্যার কোন অস্ত্র পাওয়া না যাওয়ায় কেউ ধরা পড়েনি। কিছুদিন পর সব স্বাভাবিক ভাবে চলতে লাগল। শুধু সুখেনের জায়গায় সুখেনের বাবা দোকানে বসতে লাগল, আর সুখেন একটা লাল মোটরবাইক নিয়ে দাপিয়ে বিশ্বেশ্বরের হয়ে প্রচার চালাতে থাকল। দেবল আর পুকুরের ধারে একা যায় না, যেতে সাহস পায় না। যদি আবার চোখে পড়ে সৈকত উপুড় হয়ে ভাসছে! |