আমরা মেয়েরা
সোমা
তোমার কবর থেকে অবশেষ তুলে তাকে দাফন করব নতুন করে। আমার প্রেম সবুজ ফুলকপি কাটবে ধারালো ছুরিতে। শরীর থেকে উড়ে যাওয়া পাখিরা বাষ্প আর বুদবুদের আকাশ চেনাবে তোমাকে। সবাক যৌনতা দেখাবে সেই অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ, যেখানে বন্ধ হয়েছিল অ্যালার্মঘড়ি। বিস্তৃত শস্যভূমি জুড়ে কাস্তে হাতে ধানের গোছা তুলবে ধর্ষণক্লান্ত মেয়েরা। তোমার বাঘের চামড়া থেকে বেঁচে থাকার নিদারুণ ক্লেশ তাকিয়ে থাকবে তোমার মায়ের শুকিয়ে যাওয়া বুকে– সাড়ে তিনহাত গর্ত খুঁড়ে ওই বুকে নতুন করে পুঁতব তোমাকে… আমরা মেয়েরা তুলোর কারখানা থেকে উড়ে যাওয়া রোয়া। কাশবনের ভিতর দিয়ে অপুর সঙ্গে দুর্গার দৌড়ে যাওয়া। সত্যজিৎ, ঋত্বিকের ক্যামেরার রোল অন থেকে শুরু করে বাংলা সিনেমার হালফিলের স্বস্তিকা, সোহিনীর আই কেয়ার ড্যাম অ্যাটিট্যুড। আমরা বহুস্তরীয়, বাঁধভাঙা দামোদর। মেয়েদের জন্য একটি দিন বেঁধে দিয়ে আমাদের নির্দিষ্ট করা যাবে না। আমরা একটি গোলাপ অথবা একটি ক্রিসেনথিমাম নই। আমরা বেলা বোস নই। আমরা স্বাভাবিকভাবে অনাবিল। স্বাভাবিকভাবে উচ্ছ্বল, প্রাণবন্ত, অসীম এবং যৌক্তিক। আমরা ক্রসস্টিচ, কাঁথাসেলাই, জামদানি আর মসলিনে শরীর সাজাই নিজেদের ব্যক্তিগত তাগিদে, প্রয়োজনে তাকে উড়িয়ে দিতে পারি হাওয়ায় ম্যারিলিন মনরোর জামার মতো… ইতিহাস সাক্ষ্য রেখেছে আমাদের নগ্নতার ভাস্কর্য যেকোনো পরমাণুর কেন্দ্র ভেঙে বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম। এই সত্য প্রতিষ্ঠিত। সাম্য আর অধিকারের লড়াই নিয়ে কথার বলার দিন আর নেই। অধিকার আমাদের নিজস্ব নির্বাচন, সাম্য আমাদের কর্মকুশলতায় প্রমাণিত। অশ্লীলতার বাজি জিতে নিয়েছি আমরা। শরীরের অলি গলিতে ঘুরে সহজভাবে বলতে পারি বায়োলজিক্যাল সত্যের কথা। সেইসব কথাগুলি নিজেরাই উন্মত্ত নীল হতে পারে, মহাদেবের পরোয়া করে না। মঙ্গলসূত্র, কাচের চুড়ি, নাকের নথ আর পায়ের মলমল উপহার দিয়ে আমাদের ভাবের ঘরে চুরি করা যাবে না। সেক্সুয়ালিটি আমাদের ব্যক্তিত্ব। নিছক প্রলোভন অথবা নির্যাতনে তাকে কাবু করা যাবে না। সে মুখ খুলবেই। তোমার নাকের ডগায় সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে গেলাস হাতে চিয়ার্স বলে যাবে। লজ্জা একটি পাশবিক বন্ধন। দুইহাতে তাকে ছিঁড়ে ফেলেছি বহুদিন। সমকামীতার আনন্দকে স্বরলিপিতে সাজিয়েছি। তুমি আমাকে বৈধতা দেওয়ার কেউ নও। যত বেশি নোংরা হতে চাও, হয়ে যাও, তোমার কল্পিত আইন আমাকে রুখতে পারবে না। বিরোধী আগুন তুমি– কৃপণ জীবন, নাল অ্যান্ড ভয়েড। আমার অগুনতি মাতৃত্ব পুড়িয়ে মেরেছ সন্ত্রাসে, আমার বোনের স্বাধীনতায় তুলেছ বুটজুতো। তুমি পুরুষ অথবা নারী যেই হও আমাকে ভাঙতে পারবে না। এইসব তীব্র কথার পরে আমাদের গায়ে কিছু রোজকার ধুলো ময়লা থাকে। সেসব থাকুক। আমরা দেবী নই মনুষ্যত্বে উত্তীর্ণ হতে পারলেই যথেষ্ট। প্রাণের জন্য সুস্থ জীবনের দাবি বলতে যতটুকু সম্পৃক্তি বোঝায়, ততটুকু ধারণ করতে পারলেই সেই উত্তরণের পথে এগিয়ে যাবে। নারী হিসেবে লক্ষ্মীরপটে বসে থাকা উদাহরণ নয়, যেকোনো একজন বিবেচক মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে পারার উদাহরণ হয়ে থাকব। একটা দিনের ভিতরে মেয়েদের এতকথা কিভাবে আটবে জানি না। যুগের আড়াল থেকে উঁকি দেওয়া মেয়েদের হৃৎপিণ্ডের ধ্বনির সঙ্গে যুগ অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়া মেয়েদের উচ্চারণ কিভাবে মেলাব, একটি তারিখে জানিনা। তবু কিছু মেয়েদের কথা একজোট করে সামগান গাইব তাদের সুরে। সেটুকুই সচেতনভাবে জেগে থাক। |
কী বলি,ভাবছি। এটা মুখবন্ধ শুধু নয়।এই লেখা স্বয়ংসম্পূর্ণ। লেখাটা টু ইন ওয়ান সুইচের মতো যার এক্সিট ওয়ে আর ইন্ওয়ে দুটোই আছে। সবুজ ফুলকপি রূপক হিসেবে দারুণ
কী অসাধারণ মুখবন্ধ!
দুর্দান্ত মুখবন্ধ
opurbo, mukhobondho.
sundor, khub sundor.
অসাধারন লেখনি।