সম্প্রতি পড়া শেষ করলাম শ্ৰী সব্যসাচী ধর মহাশয়ের ছোট গল্প সংকলন “মধুরিকা… আমাদের ঘরবাড়ির কথা”। ব্যক্তিগতভাবে, ছোটগল্প খুব একটা পড়িনা, তার অন্যতম কারণ যে গতিতে ছোটগল্প পড়া শেষ হয়, বর্তমান সময়ের কোনো লেখার ভাবনা বা প্রভাব প্রায়ই স্থায়ী হয় না, কিংবা পাঠক হিসেবে আমিই হয়তো একাত্ম হতে পারিনা। বলতে দ্বিধা নেই, কিছুটা নেতিবাচক মনোবৃত্তি নিয়েই বইটা হাতে তুলে নিয়েছিলাম।
আমরা, যারা মূলত শহুরে জীবন যাপন করেছি, অথচ একটা গ্রামীণ সংস্কৃতিকে চাইলেই ভীষণ আপন করে পেতে পারি, তারা বুঝি নিয়ত ইঁদুর দৌড়ের চাপ সামলানোর জন্য মাটির সোঁদা গন্ধটা বুক ভরে টেনে নেওয়া কি ভীষণ জরুরী। লাল মোরামের রাস্তা, বর্ষা মাখা সবুজ মাঠ, হেমন্তিকার আলগা কুয়াশা জড়ানো বাঁশঝাড়… এই সবের মাঝেই খুঁজে পাই অপত্য স্নেহ। আর, সেই মাটির গন্ধই যদি লেগে থাকে গল্পের পরতে পরতে, তার আবেদন অস্বীকার করা যায়না। না… এই গল্প শুধু গ্রাম বাংলার মাটির গল্প নয়, এই গল্প মানুষের অনুভূতির, ভালোবাসার, মুহূর্তের, যা এই মাটির মতোই ভীষণ সহজ, সরল, অথচ চিরন্তন।
মোট ১৬ টা ভিন্ন স্বাদের গল্প নিয়ে এই সংকলন।
“নপুংসক” ও “মধুরিকা” গল্প দুটোতে মানবপ্রেমের মধ্যে দিয়ে ঈশ্বরসাধনার এক অপরূপ রূপ দিয়েছেন। বিশেষ করে “মধুরিকা” গল্পের বিষয় ও উপস্থাপনা, বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে। O Henry র বিখ্যাত গল্প The Gift of the Magi এর সঙ্গে কিছুটা মেলে এর অনুরনণ।
“ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়”, তাই সুখাদ্যের সঙ্গসুখই “ম্যাজিক” গল্পের বিষয়।
সত্তরের রক্তঝড়া দিনগুলো কিভাবে পঙ্গু করে দিয়েছিলো অজস্র সতেজ তরুণের স্বপ্ন, তার প্রতি সার্থক শ্রদ্ধাজ্ঞাপন “রাষ্ট্রদ্রোহী”।
“বনসাই”, “বকুলতলা” বা “ডিজিটাল” গল্পের বিষয় মূলত, মানবপ্রেম হলেও বিষয় উপস্থাপনা সত্যিই চমকপ্রদ।
আমার পড়া অন্যান্য ছোটগল্পের থেকে যে বিষয়টা অন্যরকম লেগেছে তা হলো বিষয়ের পরিবেশনা বা উপস্থাপনা। চিরাচরিত বা ভীষণ সাধারণ কোনো ঘটনাকে যেভাবে গল্পের মোড়কে তুলে ধরেছেন লেখক, তা প্রশংসার দাবী রাখে; আর, তার সবটাই নির্মেদ, আড়ম্বরহীন। আর একটা বিষয় যা অবশ্যই উল্লেখ্য, তা হলো প্রতিটা গল্পের অন্তে একটা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে; মন ভালো করে দিতে বাধ্য। সহজ ভাষায়, সহজ দৃষ্টাভঙ্গিতে মাটির খুব কাছের মানুষের সহজিয়া যাপনের অনন্য ইটিবৃত্ত।
বিষয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মাটি রঙের প্রচ্ছদের উপর রেখাচিত্র, প্রশংসার দাবী রাখে। বইটা পড়ার অনুরোধ রইলো।
Souparnee Roy