পিয়াংকী

প্ল্যান বি is on the way…

পিয়াংকী

মাছ কাটার ভিডিও বা রিলস দেখতে ভালো লাগে, এর অর্থ এটা নয় যে আমিও কসাই। রক্তের দাগ আমাকে কবিতা লিখতে সাহায্য করে এটা চরম সত্য অথচ বিশ্বাস করুন লাল আমার ফেভারিট নয় কোনদিন। পর্নোগ্রাফি নিয়ে লিখতে বললে আমি শুধু স্টারকে নয় ফোটোশ্যুটারকেও বেশ্যা বলব এতে আমার কোনো লজ্জা নেই। কারণ? কারণ লেখাই আমার কাজ আর আমি আমার পার্টনারের জন্য অলওয়েজ লয়াল।
…না, এটুকু পড়ে যা মনে করছেন আমি আদৌ সেটা বলছি না। অর্থাৎ ওপরের এই সাড়ে আট লাইন আমার একার সম্পত্তি নয়। আমার মতো আরও শয়েশয়ে মেয়েদের গুমরে রাখা কথা এরা। পার্থক্য এটাই যে আমার আঙুল চালাতে হয় ফলত দু’চারজন হলেও এই আউটবাস্টটুকু জানতে পারেন। আর ওরা, যারা বুকের ভিতর এসব পুষতে পুষতে হিংস্র হয়ে ওঠেন তারা শেষ রাতে সিম্পলি থুথু ছেটান ওইসব জীবন্ত লাশেদের সবকটা গোপন দ্রাঘিমায়।
world women’s Day. বিরাট উজ্জাপণ। গরীব শহরের মাথার ওপর বিসনেস স্ট্র‍্যাজেডি। হোডিং পোস্টার ব্যানার। সোনার গয়নার মজুরিতে ফ্ল্যাট ডিসকাউন্ট। আপনি ছুটছেন। আমিও। গিফট কেনার এ’ মোক্ষম সুযোগ কে ছাড়ে৷ বরং চলুন এই সুযোগে আরও দু’গাছা চুড়ি কিনে নিই। সোনাগাছি-তে কি অফার থাকে এসময়? খোঁজ নিইনি কখনো। আচ্ছা, এবিসিডি জুয়েলার্সে এত অফার, ‘বিশ্ব নারী দিবস’ উপলক্ষ্যে লাকিকুপন। ভাগ্যের পরীক্ষা। এইসময় তো বউবাজারেও প্যাকেজ সিস্টেম থাকা উচিত। হ্যাঁ কি না! ডেটিং অ্যাপে তো রমরমা ব্যবসা। সোনাগাছিইবা কেন পিছিয়ে থাকবে? কোনো আমদানি (পড়ুন আম্বানি) বা কোনো দালাল (পড়ুন জিন্দাল) বানিজ্য করতে পারছেন না! ভারতের আদি ইতিহাস তো বলে নৌকাপথে রপ্তানীর কথা। এটাও তো এক নৌকাপথই। জলীয় সান্দ্র তরল মেখে ছিঁড়ে ফেলা কাপড়ে ফিউশন ব্লকপ্রিন্ট। লাভজনক হবার সম্ভাবনা তুঙ্গে। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসছেন না। জানি, ভয়। মুখোশ। মুখোশই একমাত্র আড়াল। নিজের সাথে। আয়নার কাছে। বুক ঠুকে বলুন তো কে মুখোশ পরেননি। শালা বললে আপনাদের মানে লাগে, ভদ্র পোশাক পরে ক্যালানি উচ্চারণ করেন না। এদিকে প্রিমিয়াম কোয়ালিটি হাতে নিয়ে ফেনা ওড়াতে ওড়াতে মামাগীমাল এর গুষ্টি উদ্ধার করেন। ইনস্টা পোস্টে ক্যাপশন থাকে ‘পার্টিমুড’। ভোগ করার পর ম-গোত্রীয়দের ছুঁড়ে দিতেও এথিকস-এ লাগে না । লাগবে কেন। ওটা তো গোপনের আয়োজন । গেম ওভার। মঞ্চের বাঁশ খোলার পালা। এই নোটে বলে রাখি এসব কথার একটিও কিন্তু জেন্ডার স্পেশিফিক নয়। Life is a way, all about love, love is the density of your own soul.
ভালবাসা, একটি অধ্যাবসায়। ভালবাসা, কবিতায় ঝুলিয়ে দেওয়া দু’চার আনা রূপক নয়। শরীর নিয়ে বিপথগামী করে মোহমদির রাস্তায় পায়ের নিচে পিষে মারা নয়। যোগীর গায়ে লেগে থাকা ধুলোর নাম ভালবাসা। পার্থিব ভিন্ন দুই শরীর, অথচ এক আত্মা-এটুকুই ভালবাসা। প্রাপ্তি শূন্য জেনেও আমৃত্যু বুকের ভিতর নি:শব্দে লালন করার নাম ভালবাসা। ভালবাসা তার নামে প্রতিদিন জ্বালিয়ে যাওয়া একটি করে মোমবাতি
“আমি সকল দাগে হব দাগী, কলঙ্কভাগী”। কলঙ্ক কি শুধু রবীন্দ্রনাথের ব্রহ্মভাবনা? শুদ্ধ কলঙ্ক অহংকারী, মৌলিক। কলঙ্ক এত ফ্যালনা নয় যে যার তার পোশাকে ছড়িয়ে দেবে ঘামের নুনটুকু অব্ধি। বরং সেই সময় সে তার ব্যক্তিগত সূর্যের অবস্থান মেপে গ্রহণের দিনক্ষণ নথিবদ্ধ করবে, জলের দেওয়াল থেকে তুলে আনবে একগোছা শাপলা। স্ত্রী-শরীর। নোংরা হবার দিন থেকে তার এই পৃথিবীর সাথে অসম যুদ্ধ, যুদ্ধ যাবতীয় অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আর নিজের সত্তার সাথে। এসবের পর ভাদ্রের ভিজে মাটিতে বাড়বাড়ন্ত নুনের দেমাক…
কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী সিনেমায় যে উত্তম-শর্মিলা জুটি দেখে বর্তে গিয়েছিল জনতা জনার্দনের ঊননব্বই শতাংশ, তারা কি পরবর্তীকালে চাঁদেরহাটে নিজেদের সংসার দরদাম করতে গেছে? অথচ এই চাঁদের সাথেই ঘরবাঁধার স্বপ্ন যাদের তারাই বারবার অভাবটুকু বিক্রি করেছে খোলা বাজারে। মেয়েমানুষের সংসার। রান্নাবাটি খেলতে খেলতে পুকুরে ঘটি ডুবিয়ে স্নান।
‘মেয়েছেলে’ জীবন। রাবড়ির মতো। এক পল্লার ওপর আরেক পল্লা সর। অজস্র শেড। শুধুই পলি। আরও চাপ। আর চাপের বর্ণ সামান্য পরিবর্তন করতে চাইলেই…
ওড়না ঝুলছে। লাল হলুদ সবুজ। সেক্সুয়ালি হ্যারাস, চুপ। সেক্সুয়াল নিড, একদম চুপ। অনিশ্চিত যা কিছু তার পাশে চামচিকে হয়ে বসে থেকে দেখো, জোনাকির শরীরে আগুন ধরিয়ে দিয়ে দেখো, মশারীর ঘুপচি কোণে উইয়ের বাসা, কাঠের খাটে ঘুণ কিন্তু কী নির্দ্বিধায় তুমি ঘুমোচ্ছ…
ঘুমোচ্ছি, আমরা। স্লোকিলিং প্রসেস। রাতের খাদ্য, ইন্টারকোর্স। দশকুড়ি– বাইশ মিনিট। সাইলেন্ট ইঞ্জেকশন। আমরা খিস্তি করতে পারি না, লোকলজ্জা। আমরা বারণ করতে পারি না, ভয়। আমরা ‘বাই’ উঠলে চাইতে পারি না, নিয়মবিরুদ্ধ। আসুন আরও হ্যারাস হই, রাত মে আ কর মর্দ না পিটেঙ্গে তো ওহ্ মর্দ আপকো পেয়ার হি নেহি করতে,মর্দ কো তো দর্দ দেনে কা পুরা হক হ্যায়।
এর চেয়ে সরাসরি বলা ভালো—
“তোমায় ভাতার বলে ডাকার সাথে সাথে…
একটা রাক্ষস ঝাঁপিয়ে পড়ে বুকের পদ্মকুঁড়ির ওপর
গাঢ় খয়েরী কুঁচকে যাওয়া বৃত্ত
এসব রাস্তা, ভরদুপুরের ভূত।
আলতো ছুঁয়ে চুষে কামড়ে কেউ এগিয়ে যাচ্ছে সদর্পে,  কমরেডের মতো
ডাকাতি কি তার নেশা? হয়ত—
বদ্ধ মাতাল। অরণ্যে হারিয়ে ফেলেছে রাস্তা অথবা এক উন্মাদ, হরিণ পাবার জন্য বাঘ হয়ে উঠছে মুহূর্তেই
এখন তো শরীরে ঘাম ঝরানো ছাড়া অন্য বিকল্প পদ্ধতি কিছুই…
থাক সেসব কথা
বরং এসো তোমায় পর্নোগ্রাফি দেখাই
এক বেশ্যা মুখের ওপর  উগড়ে দেয় বমি
দুর্গম উপত্যকা পার হয়ে এসে তুমি শান্ত হতে চাইলে
সে হাতে ধরায় আস্ত দুটি বাতাবি
খিদে বিক্রির ব্যাপারে সে বিরাট সচেতন
তুমি না চাইলেও সে দুর্গন্ধভরা আবর্জনার স্তূপে জ্বালিয়ে দেয় মোমবাতি
তোমাকে বাল-আই  বলে ডাকার সাথে সাথে…
ষাটটি পাখি উড়ে আসে ছয় ইঞ্চির অ্যান্টেনার ওপর
এদিকে তখন  মুখ থুবড়ে পড়েছে দিগন্তের সূর্য
পরিশ্রান্ত বুকে ওঠানামা করছে সেতারের তার
গলা অব্ধি ঢুকে যাওয়া ল্যাম্পপোস্টে প্রজাপতি
কামদেব কুপিয়ে কুপিয়ে খুঁড়ছেন মাটি
একটি শূন্যস্থান। দখল। যাবতীয় যৌনচিহ্ন
কোনো এক ঝড়ের পূর্বাভাস, সে বোহেমিয়ান। উত্তাল
কারা যেন তন্নতন্ন করে খুঁজছে নাভির জলকুসুম
সুডৌল নিতম্ব ছুঁয়েই বিছানায় অসংলগ্ন প্রস্রাব
ক্লান্ত অবসন্ন ঠোঁটে এখন কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি দরকার
পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ক্রমশ নীচে—
লাল গোলাপ। প্রাচীন কোনো প্রদীপ জ্বলজ্বল করছে গুহার ভিতর 
তৃষ্ণার্ত পথিক। কতকালের তেষ্টা। 
এখানে অবারিত ঝর্ণা। পবিত্র শুদ্ধ
আলগোছে এসব পেরিয়ে যেতে পারলেই আছে বিনীতআলো চিরন্তনস্পর্শ। নিরাময়ের দাঁড়িপাল্লা এখানে তুলারাশির ভারসাম্য।
:
:
:
:
আপাতত বিরতি। মৃগনয়নার ধ্যানচোখে মোক্ষ উজ্জাপণ। স্নানঘরে শীত। এহেন নিষিদ্ধ শব্দ উচ্চারণের পর ফাঁসিকাঠ অবধারিত। চন্দ্রাবতী কন্যে নিরুদ্দেশ। খবর ছড়িয়ে গেছে এ গ্রহ থেকে ও গ্রহে।
কৃষ্ণ, পথে। দুই স্তনের ভাঁজে সে রেখে গেছে তাঁর এজন্মের কান্না। সে বলে গেছে “পার্থিব সম্পদ বিলিয়ে দেব একদিন ঠিক কিন্তু চোখের জলটুকু আজ গচ্ছিত রাখলাম তোমার কাছে যত্নে রেখো”। সেই কৃষ্ণই তন্নতন্ন করে খুঁজে চলেছে তাঁর হারিয়ে যাওয়া সৌভাগ্যবতী জাহ্নবীকে…

This Post Has 2 Comments

  1. Aditi Sengupta

    তীব্র লেখা।

  2. Lutful Hossain

    শব্দগুলো ক্রমশঃ শান দিয়েছে দু’ধারি তরবারি…

Leave a Reply