ঝিলম ত্রিবেদীর কবিতা
রাত্তির রাত। নিরবচ্ছিন্নতায় ভরে ওঠা রাত আজকের। দিন শেষ। ইশকুল শেষ। পড়া শেষ হয়েছে আজকের। যে পথে দাঁড়িয়েছিল সে, সে পথের ধুলো লেগে আছে পায়ের পাতায়। জানলায় আলো হ্যালোজেন। আবছায়া ছায়াদের ছায়ানুশীলন ভেসে আসে। টুকটুক লোক চলাচল। ঝুপঝুপ দোকানপাটির ঝাঁপ। ডুবডুব ডুপকি বেজে চলে। গান গায় দক্ষিণপাড়ার মাধবী। মাধুরীলতায় বোনা গলা— আহা! ক্লান্ত কণ্ঠে যেন ছাতিমের মগ্নতা; ঘোর লাগে। ঘোর লাগে তার। সে এখন কী করছে ঘরে? চশমার কাচে বুঝি থমকে আছে আজকের রাত? দ্বিধাহীন দোসর ছেলেটি পড়া করছে বুঝি? বিছানায় এসে শোয় মেয়ে। অন্ধকার ঘর। বাহিরে বৃষ্টি নেমেছে। মনে পড়ে— কী যেন বলেছিল! এত আদো আর্দ্রস্বর, যেন শান্তিনিকেতন, যেন রাস্তা ফাঁকা আর তারা দুজনেই আইবুড়ো। লজ্জাবনত গাছ। ধীর পায়ে হেঁটে হেঁটে চলা। বাউলের মতো যেন একতারা একার আকাশ। কালো-নীল, নীল-কালো, নীল আর লাল অন্ধকার। হাত ধরে দেউল ছেলেটি। চোখ যেন মেঠো মৃত্তিকা। ঠোঁট যেন কার্তিকের মাঠ— নবান্ন, শিশির আর শিহরিত নিহিত বিষাদ! গাঢ় হয়ে আসে সে মেয়েটির শাড়ির আঁচলে। মুখ রাখে জীবনের পার্বণমুখর দুটি ঠোঁটে; ভিজে যায় ভিজে যায় কাবেরীর আহত নদীজল! নিভে আসে সকল আঘাত; দুঃখ, দারিদ্র্য নিভে আসে; দুটি প্রাণ বেঁচে ওঠে আঁধারিয়া রাতের প্রপাতে! চোখ বেয়ে জল পড়ে তার ছেলেটির খুউব সরলতা ভালোবাসে, আর কিছু জানে না সামাজিক রাতের বুড়িয়ে আসা রাত্রির নীল পারাবার গভীর গভীর করে ঘনিয়েছে মেঘ মেঘাতুর ও এখনও পড়ছে কি, না কি ওর অগোছালো গাল গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ে স্রোতের আসর ভরা সুর ও বুঝি শুনছে গান, শুনতে পাচ্ছে কণ্ঠ! মেয়ে যে ডাকছে ওকে— “বন্ধু আমার ফিরে আয় আবার দাঁড়িয়ে থাক ইশকুল ফেরত ও পথে আমি তোকে ভালোবাসি, আমি তোকে রসাতল করি আমার অরণ্য ধরে হেঁটে আয় আজ এই রাতে…” হাহাকার হাহাকার হাহাকার করে ওঠে কার সংসার সন্তান সন্তাপের প্রহার প্রহার সব ভেসে যাচ্ছে জলে— কৈশোর প্রেম ছেলেটি জলে পুড়ে যাচ্ছে তারা, জ্ব’লে যাচ্ছে রাত্রি! রাত্রি! |
অসাধারণ একটি কবিতা পড়লাম।