জয়া ঘোষ 

জয়া ঘোষের দুটি কবিতা

একমুঠো আলোর প্রতীক্ষা 

তোমায় যা কিছু সুখ আর যা কিছু অভিমান
সব কুড়িয়ে এনে বসেছি নিশিমায়ার কাছে
খুলে খুলে দেখি সেসব যেন এক একটি পাণ্ডুলিপি
প্রতিটি লিপি যেন আমারই আয়না আদল
 
জলজ চোখের মায়ায় তোমার ডুবে যাওয়া
মুখের মায়ায় জোৎস্নার আলিঙ্গন
কোঁকড়ানো  চুলের অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া আঙুলের নমনীয়তা
একসাথে অন্তিম হেঁটে যাওয়ার আকুলতা
তোমার অরব এসব পাণ্ডুলিপির কাছে ছায়া নিতে আসি কতবার 
শব্দহীন বুকের গভীরে জমে থাকা কথারা নীল রাতের নীরবতা হয়ে ওঠে
 
দূরের আকাশ পেরিয়ে সবথেকে বেশি দ্রুতগতিতে 
পৌঁছে গিয়ে দেখি
তোমার মুখের অবয়বে আমারই জলছবি
চেয়ে আছ অপলক, আর ছড়িয়ে দিচ্ছ সহস্র কথার অনুভব
ফিরে আসি দু-হাতে ঐশ্বর্য নিয়ে
এত সম্পদ এত সম্পদের পরে ফিরে আসার কি আর কোনো মানে হয় 
হে পরম এবার পাত্রে আলো দাও একমুঠো
পিপুলের নীচে খুলে রেখে সব
আমিও ভিক্ষুণী হয়ে যাই। 
 

স্মৃতিভেজা ঘাসমন 
 
চেনা ঘরদোর, প্রয়োজন, পেরোলেই এক অন্য আকাশ দেখে পথ। আছড়ে পড়ে সমুদ্র-ঢেউ। 
কথারা লগ্নভ্রষ্ট হয়।
 
স্মৃতিভেজা, মনব্যথা, বাতাস মাখে চন্দন ঘ্রাণ 
চোখ ভরে আসে আনমনে, শিকড়ের টান।
কতপথ ঘুরে ঘুরে এ জন্মের একমুঠো রোদ্দুর, আধেক আকাশ, নোনাস্বপ্নে বিরাণ সময়।
 
আহত মনখারাপ, অলখ কান্না, রেখে দিই তারাদের কাছে। শেষ সম্বল অসময়েও সূক্ষ্ম আবেগ ছাই হয়ে উড়ে যায় পথের সুখে।
 
চেনামুখ অচেনা হয় জন কোলাহলে। হিমেল বাতাসে ভেসে আসে আবছায়া অতীত, পুরোনো গন্ধ, 
বড় চেনা,  বদলায় না। ঝাঁপি খুলে মিলিয়ে নিই পুরোনো নতুন সব স্তবগান। মনখারাপগুলো আরো একবার নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ে মৃত ঘাসমন শয্যায়। 
 
অবিচ্ছিন্ন অন্ধকার, মৃত মনখারাপ, কথাশূল, অব্যক্ত গোপন শিলালিপি, ক্ষতসুখ সব ছেড়ে যাব একদিন।
ঠিক ছেড়ে যাব। 
 
আবেগগুলো ধূলোর মতো মিশে গেলে অযাচিত, মূল্যহীন, অপেক্ষারা ক্রমশ  হারিয়ে যায় একদিন।
মনখারাপগুলোও ঠিক একদিন  আকাশের তারা হয়ে যায়।

Leave a Reply