কঙ্কনা ভৌমিক
প্রিয় সই অতুলনা এখনো কি রাগ হলে না খেয়ে থাকিস? খুব অবাক হয়েছিস বল একে তে দীর্ঘ সময় ধরে যোগাযোগ নেই তার উপর আবার ফেসবুক হোটাস অ্যাপের যুগে হঠাৎ চিঠি । আসলে দিন কয়েক আগে কাকিমা মানে তোর মায়ের সঙ্গে কিছু টা অপ্রত্যাশিত ভাবে দেখা হয়ে যায়। তাঁর কাছে ই তোর ঠিকানা আর ফোন নম্বর যোগার করি। কিন্ত কি জানি কেন ফোন না করে চিঠি লিখতে বড় ইচ্ছে হলো। ঠিক সেই আগের মতই তখন যখন কলেজে ছুটি পড়তো দুজন দুজনকে কত কিছু লিখে পাঠাতাম চিঠি তে। শুনলাম যে তুই না কি এখন থাকিস ঠান্ডার দেশে। কি করে আছিস রে তুই খুব জানতে ইচ্ছে করছে। বড় শীতকাতুরে ছিলিস যে। মনে আছে শীতকালে ওত সকালে কলেজে আসতে তোর কত কষ্ট হতো। ক্লাসে এসে আমার গা ঘেঁষে বসতিস। মনে পড়ে তোর একবার কলেজের অনুষ্ঠানে দুই জনে একসাথে কবিতা আবৃত্তি করে কত প্রসংশা পেয়েছিলাম। কিন্তু মুশকিল বাঁধলো তখন যখন একটি ই পুরস্কার পেলাম। দুজনের মধ্যে সেটা্ তখন কার বাড়ি নিয়ে যাওয়া হবে সেই নিয়ে মন কষাকষির পালা চলল। শেষমেষ ঝগড়ায় জিতে তুই সেটা নিজের সঙ্গে নিয়ে গেলি। কি ভিষন দুঃখ যে পেয়েছিলাম কি আর বলব। এখন ভাবি যদি আমি নিয়ে যেতাম তাহলেই তো একই রকম দুঃখ তুই ও পেতিস তা তে কি আর লাভ হতো । কলেজ যদি সে দিন কৃপনতা না করে দুই জন কে দুটো বই দিত তাহলে দুই জনের মধ্যে কোনো ঝামেলা ই হতো না। অবশ্য কয়েক দিন মান অভিমানের পালা চলার পর আবার সব ঠিক হয়ে যায়। এমনি আরো কত শত কথা আজ মনে পড়ছে। মনে হচ্ছে যেন এই তো সেই দিনের কথা।অথচ মাঝে চলে গেছে কত গুলি দিন কত গুলি বছর।কত ঘটনা ঘটে গেছে জীবনে। কিন্তু যেন মনে হচ্ছে এই কয়েক দিন মাত্র আগেই তোর চিঠি পেলাম আর আজ তার উত্তর দিতে বসেছি। ওমা দ্যাখো কান্ড এত কথা লিখে ফেললাম অথচ তুই কেমন আছিস সেই টাই জিগ্যেস করলাম না এখনো। কেমন আছিস সই?আশা করি খুব ভালো আছিস। আমি আছি মোটামুটি জীবনের অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে। সব সময় মনে হয় আমাদের সেই সহজ সরল জীবন টা কি যে ভালো ছিল। এখন বড় জটিলতায় মোড়া। তবুও বন্ধু রা বেঁচে থাকার রসদ।তাই আজ সেই আগের মতোন চিঠি লিখতে পেরে অনাবিল আনন্দ উপভোগ করলাম। জানি এই চিঠি পড়তে গিয়ে তোর ও আনন্দে চোখ বারবার ঝাপসা হয়ে আসছে। তোর ওই আনন্দাশ্রু ই আজ আমার পরম প্রাপ্তি। ভালো থাকিস। একরাশ ভালোবাসা রইলো। চিঠি র উত্তরের অপেক্ষায় থাকা ইতি আমি মধুরা । |