অয়ন অধিকারী

অয়ন অধিকারী

প্রিয়তমা,
এই শহরের সব টা আলো নেভাও
বুকের উপর খামচে ধরো নখ ;
নিঃশ্বাসে আজ আবার আগুন জ্বালাও,
আদর শেষে শান্ত দুটো চোখ।
একটা পড়ন্ত বিকেলে নির্জন সমুদ্র সৈকতে একা দাঁড়িয়ে থাকা একটি ছোট্ট কুঁড়ে ঘর। কমলা আলোর আল্পনা আঁকা ঢেউ বালিতটে আছড়ে পড়ছে ক্রমাগত। আদিগন্ত বিস্তৃত সাগরের উপর দিয়ে বয়ে আসা ঠান্ডা হাওয়ায়, গা শিরশিরে ভাব।  সাগর পাড়ের নাম না জানা গাছের পাতায় ফিসফিস। যেন ভীষন নিষিদ্ধ, আদিম, বন্য কিছুর সাক্ষী হয়েছে তারা।
এসো ঘরের ভিতরে।  খড়ের ছাউনি ঢাকা ঘরের ভেতরটা অন্ধকার। কিছু দেখা সম্ভব নয় এখনই। অন্ধকারে চোখ সয়ে এলে দেখা যাবে। দুটো শরীর। নিরাবরণ দুটো শরীর। একজন উৎস আর একজন গন্তব্য। আদর শেষের ক্লান্তি মেখে থাকা দুটো শরীর। ঘামে ভিজে থাকা পিঠে, লেপ্টে থাকা বাদামী চুল গুলোয় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে একজন, পরম যত্নে। অপর জন নিষ্পলক চেয়ে রয়েছে তার সঙ্গীটির চোখের দিকে। শরীর, মনের সীমা পেরিয়ে গিয়ে এক পৃথিবী উপচে পড়া প্রেম আর একে অন্যের মধ্যে প্রোথিত হয়ে থাকা দুটো শরীর। তবে মন !  একটি, মাত্র একটি মন এখন। বাকী সব কিছুই, অবান্তর।
বরফ পড়ছে বাইরে। রাত্রি যত গাঢ় হয়ে আসছে, বাইরের জমাট বাঁধা শীত, ঘরের ফায়ার প্লেসের আগুনের তোয়াক্কা না করেই জেঁকে বসছে ক্রমশ। কিন্তু তোমার আমার মাঝে, যেন ভরা দুপুরের মরুভূমির তেজ। একটু আগেই, ছদ্ম অভিমানে গাল ফুলিয়ে, আমায় পিঠ দেখিয়ে শুয়েছিল তুমি। আমার বেয়াদপ আঙুলগুলো যেই না তোমার কাঁধ বেয়ে নেমে এলো পিঠে, ওমনি তোমার সব রাগ, গলে বাষ্প হতে শুরু করেছে। এবার তুমি, আমি মুখোমুখি। যুদ্ধ শুরুর আগে, মেপে নেওয়া প্রতিপক্ষকে। আমার আঙুল গুলো এখন আরো অসভ্য। তোমার কপাল থেকে ঠোঁট ছুঁয়ে ক্রমশ নামছে গলা বেয়ে। এগোচ্ছে পর্বতারোহনের উদ্যেশে। একপা, দু পা করে এগিয়ে যাচ্ছে আঙুল। নিশি আগমনে, রোমাঞ্চিত জমি কেঁপে কেঁপে উঠছে। আরোহণে বাধা দিচ্ছে, তোমার শরীরের জেগে ওঠা কাঁটা। তবে আমি অদম্য। গিরিশিখরে পৌঁছে যাবোই। তোমার রোমাঞ্চিত শরীরের শিৎকার আর পূর্নতা প্রাপ্তির এই মাহেন্দ্রক্ষণের সাক্ষী হোক শুধু নিঃস্তব্ধ চরাচর আর  কাঁচের জানলা বেয়ে ঘরে আসা , পূর্ণিমার  আকাশ জোড়া চাঁদের আলো। আর আমি।
একটু স্বাভাবিক হয়ে নাও। নাভী মূল থেকে ক্রমশ উপরের দিকে উঠে আসছে যে, কম্পমান সরীসৃপ, তাকেও একটু শান্ত করে নাও। আবার আমরা অভিযানে যাবো।
আকাশ ঢেকে আছে ধূষর মেঘে। মেঘের বুক ফাটিয়ে মাঝে মধ্যেই এক একটা রুপোলী সুতোর রেখা ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে মাটি। টিপটিপ, অবিরাম বৃষ্টি দেখছে তোমার, আমার শহর। যেন মহাশূন্যের  কোনো গুপ্ত প্রেমিক, সিক্ত করছে তার প্রেমিকাকে। এই যেমন একটু একটু করে আমি তোমায় ভিজিয়ে দেব। বাইরে শহর ভিজুক বৃষ্টিতে। আর ভেতরে আমরা ভিজি তুমি-অমিতে, আমি-তুমিতে। তোমার কপাল, নাক, ঠোঁট পেরিয়ে আমার আমার ঠোঁট নামছে তোমার গলা বেয়ে। এই ছুঁলাম তোমার কাঁধ। আলোড়ন তোমার শরীর জুড়ে। কাঁধ পেরিয়ে তোমার বুকের খাঁজ। অভ্যস্ত আমার ঠোঁট একটু একটু করে নামছে। আমার পিঠে গেঁথে বসছে তোমার নখ। এ যেন এক রত্নখনির খোঁজ। গুনে দেখা, তোমার শরীরের গর্ত।
একবার শুধু ছুঁয়ে দিলাম ঠোঁট দিয়ে। প্রজাপতির মত ডানা মেলে উন্মুক্ত করলে তুমি, তোমার মধ্যে প্রবেশের পথ। এ সন্ধানের প্রাপ্তি, শুধুই সন্ধানের চেষ্টায়, প্রাপ্তি কর্ষণেই।  চেনা পথে, আমি আবার প্রবেশ করছি তোমার মধ্যে। যেন প্রাচীন কোনো স্বরীসৃপ, পরিবেশ করছে তার প্রিয় বাসস্থলে, শীত ঘুমে। কোনো এক নতুন ভোরে, আবার সে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসবে মুক্ত বাতাসে। আমায় এভাবেই নিজের মধ্যে রেখো তুমি। লুকিয়ে। বাঁচিয়ে।
ব্যাস। বাকি আর কিছু বলবো না। এর বেশী লিখতে গেলে, সেটা শ্লীলতার সীমা পেরিয়ে যাবে। আর একটি প্রেমের চিঠিতে, সেটা কখনোই কাম্য নয়।
কিছু প্রেম শরীর সর্বস্ব হলেও, তাদের শুরুটা মনের চাহিদা মেটানোর তাগিদেই হয়। একতরফা প্রেম হলেও, এটাই সত্যি। কোনো প্রমানের ভরসায় না থেকেও, এটাই সত্যি। তবে প্রেমে শরীর থাকবে না, এটাও নিতান্ত বালখিল্য কথা-বার্তা। তোমায় ছুঁতে চাওয়ার ইচ্ছেরা, নিশাচর গোত্রের। ওরা রাত্রে ঘুমায় না। আমিও আটকে রাখিনা ওদের। নিশাচরেদের, আমার ভিতর অবাধ আসা-যাওয়া।
তবে কি শুধুমাত্র শরীর ই থাকবে ? তেমনটা আমি বিশ্বাস করিনা।  তোমার আমার প্রেম আপাতত শরীর কেন্দ্রিক নয়। বেঁচে থাকলে, কোনো এক সময় সেই পর্যায়ে যে পৌঁছবে না, এই কথা আমি জোর দিয়ে বলবো না। তবে, তখনও যদি মনের তাগিদ থাকে, যদি মনের শীতল অংশ গুলোর উষ্ণতার প্রয়োজনে তখনও আমার কথা মনে আসে ; তাহলে জেনো, তোমার আমার সেই প্রেম সফল হয়েছে। এই মুহূর্তে তুমি আর আমি যেন সত্যি কয়েক যোজন দূরে। তবুও দেখ, স্বশরীরে তোমার কাছে না থেকেও আজ ছুঁয়ে দিয়েছি তোমায়। আমি এই ভাবেই ছুঁয়ে থাকতে পারি তোমায়, আমার বাকি দিন গুলোয়।। তুমিও কি পারো ? পারো নিশ্চই। ঠিক এই খানেই, সব নিয়ম, সব নিষেধ, সব ব্যবধান, সব নিষিদ্ধতা গুলোকে হেলায় হারিয়ে তোমার আমার প্রেম জিতে যায় আবার। প্রতিবার।
জৈবিক চাহিদার উর্ধ্বে কেউ নয়। না আমি, না তুমি। শরীরের ফাঁকটুকু বুজিয়ে নেওয়া সম্ভব হলেও, মনের ফাঁক যেন আস্ত এক কৃষ্ণ গবহ্বর। অসীম তার চাহিদা।  কিন্তু আমি ভাগ্যবান, যে তোমার মনের ভিতরের ফাঁকটুকু পূরণ করার সুযোগ আমি পেয়েছি। কতটুকু পেরেছি জানি না। তবে চেষ্টা করি। চেষ্টা করার সাহস পাই, কারণ ; কোনো এক নাম না জানা কৃষ্ণ গবহ্বর, আমার ভিতরেও রয়েছে।  সেটুকু যে তুমিও বুঝতে পারো, তা আমি জানি। তোমার এই বুঝতে পারা টুকুই একান্ত ভাবে আমার প্রাপ্তি। বাকি টুকু, এবারের মত বাকী থাক।
 
ইতি,
তোমার গন্ধে মিশে থাকা, আমি।

Leave a Reply