অভিষেক দত্ত
প্রিয় তিস্তা, অনেকদিন পর লিখছি তোমায়।কেমন আছো? জানো আজ সকাল থেকেই আকাশের মুখভার।তোমার মতোই অভিমানী দেখছি আজ সে।নিরীহ একখানি রোদ্দুর আমাদের ঝুল বারান্দায় ছুটোছুটি করতে করতে হটাৎই মিলিয়ে গেল। তারপর থেকেই শিকড় ছেঁড়ার গন্ধ নিয়ে পাতাদের টিপ টিপ সংসার ভিজে যাচ্ছে বৃষ্টিধোঁয়া জলে। এক কাপ কফি নিয়ে বসেছিলাম।এখন জানতো কফির শিশি নিয়ে আসি মাসের প্রথমেই। কতদিন মুদির ফর্দ তুমি তৈরি করোনা বলত? যাই হোক যেটা বলছিলাম হটাৎ চোখ গেল বইয়ের তাকে। তোমার দেওয়া জন্মদিনের উপহার জীবনানন্দের কবিতা সমগ্র। মনে আছে তোমার? জীবনানন্দকে তোমার বিষাদের কবি মনে হতো কেন আজও জানা হয়ে ওঠেনি আমার তোমার কাছ থেকে। মন খারাপের বৃষ্টিদুপুর যখন যখন সমস্ত কোলাহল নিভিয়ে দিত জামরুলের বনে তুমি চাদর ফেলে নেমে আসতে এই ঝুল বারান্দায়।মনে পড়ে? রোদ্দুর মাখা সেই হলুদ পাঞ্জাবীর বোতাম ,বাথরুমের হাতল ভাঙা লাল মগ, গ্যাসের পুরানো স্টিলের ওভেন সব কিছুই বদলে ফেলেছি জানো? শুধু উলবোনা জ্বরের দিনগুলি এখনো এই বৃষ্টি দুপুরে এলোমেলো ছড়িয়ে থাকে মেঝে জুড়ে।তুমি এলে গুছিয়ে রেখো। নাহলে এরকমই অগোছালো কেটে যাবে জীবন।জীবন, আহা কত দীর্ঘ ম্যারাথন তাইনা? হাপ ধরলেই ট্রাকের বাইরে এসে দাঁড়াতে হয়।দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে জীবনের সমস্ত রাজনীতি,প্রতিযোগিতা, হতাশা,প্রতিশ্রুতি, পাঞ্জা লড়াই, এমনকি পিঠ ঠেকানোর দেওয়াল টুকুও নুয়ে আসে। বড় গোলাম আলির গলা ভেসে আসছে রেডিও থেকে। একটা অদ্ভুত খুশবু ছড়িয়ে যাচ্ছে ঘরময় আর চড়াইয়ের বুকের ওমটুকু নিয়ে এই নির্জন দুপুরে ভিজে যাচ্ছে বুড়িছোঁয়া ভাঙচুর স্কুলঘরের কলতলা। এই দেখো কথায় কথায় আমার কফিও ফুরিয়ে এলো।খালি গ্লাসে ভেসে উঠছে অর্থহীন পথ।যেমন করে তুমি বলতে।মনে আছে?আচ্ছা এই অর্থহীন পথেই কি জীবন টাকে অভ্যেস করে ফেলেছি আমরা? পথশ্রমের সেই ক্লান্তি একদিন আলোর ফোয়ারা হবে আষাঢ়ে শ্রাবণে ,এইরকমই তো ভেবেছিলাম আমরা।তাইনা? অধিক পুড়েছি বলেই কি এই শরীর ব্যার্থ মহাদেশ?সেই ভ্রাম্যমান আলোর খেলা আজও ফুরায়নি বলো?ওহ বলতেই ভুলে গেছি ফ্যানের রেগুলেটর বদলেছি।এখন আর তোমার মাঝরাতে অস্থির লাগবেনা।তুমি ওষুধ গুলো ডাক্তারের কথা মত খাচ্ছ কি?আমার মনে হয়না তুমি এত বাধ্য হবে ওই গম্ভীর ডাক্তারের কথায়। কত দিন তোমার সিঁথির রাঙা মেঘ দেখা হয়নি বলো? যখন দেখব হয়তো মুটিয়ে গেছ ঢের। আমিও যে হাঁপিয়ে যাই দিন গুনতে গুনতে।ক্রমশ ক্ষয়ে ক্ষয়ে জেনেছি ফুরিয়ে আসছে এই জলের জীবন।আজ এখানেই শেষ করি। চিঠি দিও। ভালো থেকো। তোমার রীপ |