অভিষেক ঘোষ
প্রিয়, বিনোদিনী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অমর সাহিত্যে তুমি ছিলে আশালতার ‘চোখের বালি’, কিন্তু পুরুষ চরিত্রদের চোখে তুমি প্রথমে পতঙ্গ, অনতিবিলম্বে বহ্নি! মানসলোকে তোমাকে স্পষ্ট দেখতে পাইনি কখনো, তবুও তোমাকে ‘বিনোদ’ বলে ডাকতে ভারী ইচ্ছে করে। মনে হয় তুমি যেন রবি ঠাকুরের ‘নিরূদ্দেশ যাত্রা’-র সেই নায়িকা। ‘চোখের বালি’-তে তোমায় বুঝতে চেয়ে প্রায়শই মনে হয়েছে — “বুঝিতে না পারি, কী জানি কী আছে তোমার মনে! নীরবে দেখাও অঙ্গুলি তুলি অকূল সিন্ধু উঠিছে আকুলি, দূরে পশ্চিমে ডুবিছে তপন গগনকোণে। কী আছে হোথায় — চলেছি কিসের অন্বেষণে?” যেন এক অকূল দরিয়ায় তুমি-আমি একই তরণীর সঙ্গী। তফাৎ এই — আমি অসহায় তরুণ, সাঁতার জানি বটে, কিন্তু ‘বিপুল তরঙ্গ রে’! ওদিকে তোমার হাতে বৈঠা, সহসা ওড়ে কেশরাশি, চকিতে দুচোখ দৃশ্যমান হয়, বাকি মুখ বাতাসে এলোমেলো চুলে ঢাকা। মনে হয়, যেন ঐ চোখে ডুবিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা। এভাবেই কি তবে, আমি বিটা, তুমি আলফা হয়ে যাবে? বিনোদ, আজকাল কর্মহীন গৃহবন্দি দিনগুলিতে বড্ড ক্লান্ত আর একলা লাগে । মনে হয় – “জীবন গিয়েছে চলে আমাদের কুড়ি-কুড়ি বছরের পার — তখন হঠাৎ যদি মেঠো পথে পাই আমি তোমারে আবার!” — তাহলে বড়ো ভালো হয়। তোমার ছড়ানো করতলে একটু কপাল ছুঁইয়ে সময়ের জ্বর মেপে নিতে পারি। ধোঁয়া ওঠা আমার চায়ের কাপে তুমি তোমার ঠোঁট একটু ছুঁয়ে দিতে পারো। তোমার অনভ্যাসের অসাবধান চুমুকে ওষ্ঠে অঙ্কিত হোক মৃদু গোঁফ, আমার অনামিকা তা মুছে দিয়ে যাক্। আমার বিছানায় থাকুক তোমার ঘ্রাণ। বিনোদ তোমার বক্র চোখের আরক্ত ইশারায় আমি হেমন্তের রিক্ত মাঠে নগর সংকীর্তনে বেরোতে পারি — শুধু ভয় হয় — হয়তো আর ফিরবো না। কিন্তু, কী হবে ফিরে? “নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে।” — নয়নবাণ বলে কিছু হয় বিনোদ? যদি হয়, তবে তার আঘাতে এই তেত্রিশের তরুণ ইচ্ছামৃত্যু চায়। দেবে না বিনোদ? এই বিশ্ব-উষ্ণায়ন-কবলিত, আজন্ম-অনাদৃত শরীর একটু শান্তি চায়! দেবে না বিনোদ, তোমার বাহুমূলে একটু হেলান দিতে? বিনোদ তোমার সাথে, হাতে হাত রেখে আমি সাহিত্যের টাইম স্কোয়ারে হাঁটতে চাই, শুনতে চাই কালজয়ী সাহিত্যের বিগ-বেনের মহা ঘন্টাধ্বনি। এই মুদ্রাস্ফীতির বাজারেও আমি তোমার খোঁপায় রক্তরঙা গোলাপ কিনে এনে আটকে দিতে চাই। তুমি পরবে না বিনোদ? — ইতি, অভিষেক |